দেবীদ্বারে কাউন্সিলরদের তালিকা ছাড়াই উপজেলা আ.লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: বুধবার ৩১শে আগস্ট ২০২২ ০৫:১৭ অপরাহ্ন
দেবীদ্বারে কাউন্সিলরদের তালিকা ছাড়াই উপজেলা আ.লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন

কাউন্সিলরদের তালিকা প্রণয়ন ছাড়াই ২৬ বছর পর আগামী ২সেপ্টেম্বর দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

বহুধা বিভক্ত আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়াতে কাউন্সিলরদের মতামত বা ভোটাভোটি ছাড়াই সম্মেলনের কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটি। সম্মেলনের দিন কাউন্সিলরদের ভোটা ভোটির পর্ব না রেখে শুধুমাত্র বক্তৃতা পর্ব রাখায়, সম্মেলনকে ঘিরে নেই কোন উত্তাপ, আমেজ, প্রচার- প্রচারনা। সম্মেলনে কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটা ভোটি না থাকায় কাউন্সিলরদের দ্বারে দ্বারেও কোন প্রার্থীরা যাচ্ছেন না। প্রার্থীরা দলের বিভক্ত নেতৃত্বদানকারী নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন। 


২৬ বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় আওয়ামী লীগের পদপদবী পেতে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে অর্ধশতাধিক প্রার্থী আবেদন করেছেন বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। তবে কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ'লীগের সাধারন সম্পাদক হাজী রোশন আলী মাষ্টার বলেন, দির্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় পদপদবী পেতে দলীয় নেতা- কর্মীদের চাপ রয়েছে বেশী। তাই প্রার্থী তালিকা থেকে সভাপতি পদে ৭ জন ও সাধারন সম্পাদক পদে ২৪ জনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তবে কে সভাপতি- সাধারন সম্পাদক পদে আসছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা।


গত ২ জুন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির এক সভায় কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সচিব এ,বি,এম গোলাম মোস্তফাকে আহবায়ক ও দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই বৈঠকে দেবীদ্বার উপজেলা ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২ জুলাই ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২ জুলাই পরিবর্তন করে ২১ জুলাই করা হয়। গত ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় এক জরুরী বৈঠকে এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের মধ্যে দেশব্যাপী আলোচিত মারামারিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্মেলনের তারিখ আরো এক দফা পিছিয়ে আগামী ২ সেপ্টেম্বর করা হয়। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে একাধিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও ৯ বার সম্মেলনের তারিখ পেছানো হল। 


দেশ স্বাধীনের পর ৫২ বছরে দুথটি নির্বাচিত কমিটি ছাড়া আওয়ামীলীগ খুড়িয়ে চললেও সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুখ দেখেননি। বিভিন্ন সময়ে দলীয় বৈঠকে সিলেকশনে সভাপতি, সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক নেতা-কর্মী। তবে এ সময়ে যারা আ'লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দলের ত্যাগী সম্মানীত ব্যাক্তিবর্গ ছিলেন। ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকালে দেবীদ্বার আসনের সাবেক এমএলএ বৃহত্তর কুমিল্লা (কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাক্ষণবাড়িয়া) জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও শ্রমিক নেতা আব্দুল আজিজ খান দেবীদ্বারে এসে আলী আশরাফ ভূঁইয়াকে সভাপতি ও এডভোকেট জানে আলমকে সাধারন সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করে যান। তার পর ১৯৯১ সালে সম্মেলন মাধ্যমে অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদকে সভাপতি ও আব্দুল মতিন মূন্সীকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আলহাজ্ব জয়নুল আবেদীনকে সভাপতি ও একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সাধারন সম্পাদক করে গঠিত কমিটির পর আর কোন সম্মেলন বা কমিটি গঠন করা সম্ভ হয়নি। 


এসময় বার বার সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিলেও মামা (সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আথলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফা)- ভাগ্নের (সাবেক উপ-মন্ত্রী ও এমপি, আথলীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মূন্সী)থর মধ্যে গ্রুপিং ও দলীয় আধিপত্তের দ্বন্দ্বে আর সম্মেলন হয়নি। বর্তমানেও ওই ধারা অব্যাহত আছে। মামা- ভাগ্নের দির্ঘদিনের দ্বন্দ্ব এখন আর প্রভাব না পেলেও তাদের উত্তরাধীকার সাবেক উপ-মন্ত্রী ও এমপি, আথলীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মূন্সীথর পুত্র বর্তমান সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আথলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফাথর অনুসারি আথলীগ কুমিল্লা (উঃ) জেলা সাধারন সম্পাদক রোশন আলী মাষ্টারের দ্বন্দ্বের কারনে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। 


২৬ বছরের চলমান কমিটির ৫১ সদস্যের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতি, দপ্তর সম্পাদক সহ মারা গেছেন ১৪ জন, দল ত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করেছেন ২জন, আথলীগ উপজেলা কমিটির সম্পাদক ও সদস্য ১৩জনকে কেউ চেনেননা ওরা সবাই নিস্ক্রীয় ও প্রবাসী। বাকী ২১ জনের মধ্যে ৪/৫ জন ছাড়া সবাই নিস্ক্রীয়। বর্তমানে এই কমিটি নামে থাকলেও কার্যত কোন কাজে নেই। এ নিয়ে খোদ ক্ষমতাসীন দলেই ক্ষোভ বিক্ষোভের অন্তঃনেই। 


দির্ঘ সময় ধরে নেতৃত্বে আসতে পারছে না অনেক সম্ভাবনাময়ী তরুণ। ক্ষমতাসীন দল হওয়া সত্ত্বেও এখানে নেই কোন দলীয় কার্যালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা দাবী করেন, সম্মেলন না হওয়ায় দলের নেতৃত্ব বাড়েনি, যারা নেতৃত্বে আসার মতো তাদের মধ্যে অধিকাংশই সেই ছাত্রলীগ, যুবলীগের পরিচয়ে নিজ সন্তানদের সাথে মিছিলে এখনো অংশ নিতে হচ্ছে। 


উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান বলেন, আওয়ামীলীগ বড় দল গ্রুপিং থাকবেই। তাছাড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নের কাউন্সিলর নির্বাচিত করা হয়েছিল। বাকীগুলো করার আগেই বিতর্কিত কাউন্সিলরদের বাদদিয়ে সংশোধন করার কথা থাকায় এবং দলের বিভক্তি ও সংঘাত এড়াতে কাউন্সিলর ছাড়াই আগামী ২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।