রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীর গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে গণসমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১০ দফা ঘোষণা করেন।
বিএনপির ১০ দফা :
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন। সেই নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল।
৪. খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় সব নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি। দেশে সভা, সমাবেশ ও মতপ্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা। স্বৈরাচালী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী আইন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
৮. ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন। দুর্নীতি চিহ্নিত করে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া।
এর আগে, শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় কোরআন পাঠের মধ্য দিয়ে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের মূল মঞ্চে ২টি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছে। যার একটিতে খালেদা জিয়া ও অপরটিতে তারেক রহমানের নেমপ্লেট রাখা হয়েছে।
সমাবেশে যোগ দিতে শুক্রবার বিকেল থেকেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাতেই ভরে যায় গোলাপবাগ মাঠ। শনিবার ভোর হতেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় মানিকনগর বিশ্বরোড, ধলপুর রোডসহ কমলাপুর থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের রাস্তা পর্যন্ত অবস্থান নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে সরকার ও বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা যেকোনো মাঠে করার কথা বলা হয়। বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে থাকে। এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেই বুধবার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজনের মৃত্যু এবং অনেকেই আহত হন।
এরপর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাসহ অন্তত তিন শতাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সংঘর্ষের পর থেকে এখনও নয়াপল্টন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে সমাবেশের স্থান নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের ফের বৈঠকে হয়। বৈঠকে বিএনপি কমলাপুর স্টেডিয়াম এবং ডিএমপির পক্ষ থেকে বাঙলা কলেজ মাঠের প্রস্তাব করা হয়। রাতেই বিএনপির পক্ষ থেকে এই দুই স্থানের যেকোনো একটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে নতুন করে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের করতে চাইলে অনুমতি পায় বিএনপি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।