দিনে দিনে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে : বাসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ৪ঠা মার্চ ২০২২ ০৬:১৫ অপরাহ্ন
দিনে দিনে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে : বাসদ

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের প্রথম কংগ্রেস (সম্মেলন) উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ থেকে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পাওয়ায় মহানগর নাট্যমঞ্চের উন্মুক্ত মাঠে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার বিকেলে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর ব্যানার-ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করে।


বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন শ্রীলঙ্কা থেকে আগত জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা দলের সাধারণ সম্পাদক তিলভিন সিলভা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন।


সমাবেশ পরিচালনা করেন কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

সমাবেশে ড. খালেকুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশে আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত। মুক্তিযুদ্ধের ঘোসণা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সংবিধানে উল্লিখিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এখন বুলিসর্বস্ব। সাম্যের বদলে বৈষম্যের আকাশ পাতাল ফারাক তৈরি হয়েছে। মানবিক মর্যাদা তো দূরে থাক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নাগরিক অধিকার নেই। লুটপাটকারী বিত্তবান ও ক্ষমতাশালীদের মিথ্যা মর্যাদার গ্রাসে সত্যিকার মানবিক মর্যাদা বিলুপ্ত হয়েছে। সামাজিক সুবিচার ও ন্যায় বিচার সমাজ থেকে উধাও হয়ে গেছে। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী ঘরে-বাইরে সর্বত্র সার্বক্ষণিক ভীতিকর পরিবেশে বাস করছে।


দেশে পরিবারতন্ত্র, লুটপাটতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র শাসনব্যবস্থায় স্থায়ী আসন পেতে বসেছে উল্লেখ করে খালেকুজ্জামান বলেন, সরকারী দল নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা রক্ষার মিশনে রূপ দিতে চেয়েছে। ফলে দিনে দিনে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিনা ভোটে নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে সেরে ফেলার নির্বাচন ইত্যাদিতে সমালোচনার ঝড় সামলাতে সরকার গণদাবিকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি এক নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করেছে। এতে মানুষের অনাস্থা কাটেনি, বরং নতুন সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তিনি সর্বহারা আন্তর্জাতিক গড়ে তোলা, দেশে দেশে শ্রমিক আন্দোলনে সংহতি স্থাপন, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংস্থা গড়ে তোলা, পুঁজিবাদ-মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রাম জোরদার, সাম্রজ্যবাদী যুদ্ধ ও যুদ্ধ চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন।


সমাবেশে তিলভিন সিলভা বলেন, দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধ চক্রান্তের বিষময় ফল ভোগ করছে শ্রীংলকার জনগণ। জনগণকে বিভক্ত রাখা এবং লুণ্ঠন অব্যাহত রাখার এই  দুই কৌশল শাসকগোষ্ঠি অব্যাহত রেখেছে। আমরা পুঁজিবাদী শোষণ আর সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে লড়াই করে যাচ্ছি। এই লড়াইয়ে বিশ্বের মেহনতি মানুষ আমাদের বন্ধু।


মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বাংলাদেশের জনগণ শাসকগোষ্ঠির চেহারা দেখেছে, দেখেছে তাদের প্রতারণা। এখন প্রয়োজন বামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম। তিনি বুলি সর্বস্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল বামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।


সাইফুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের কোন বিকল্প নাই। আন্দোলনের পথেই অধিকার আদায় এবং সরকারের পতনকে অনিবার্য করে তুলতে হবে।


সমাবেশ শুরুতে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং অস্থায়ী ভাবে নির্মিত শহীদ বেদীতে মানবমুক্তির সংগ্রামে জীবন দানকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। সমাবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। সর্বহারা আন্তর্জাতিক গেয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।


সমাবেশে জানানো হয়, বাসদের কংগ্রেস উপলক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার)’র চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দহল প্রচন্ড, কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসিস্ট-লেনিনিস্ট) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, আমেরিকার ওয়ার্কার্স ওয়ার্ল্ড পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সারা ফ্লাউন্ডার, রাশিয়ার অল ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টি অফ দ্যা বলশেভিকের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক লেভ যাৎসেপিলভ, জার্মানীর মার্কসিস্ট ও লেনিনিস্ট পার্টি অফ ডয়েসল্যান্ড-এমএলপিডি’র নেতা মনিকা গার্ডনার, তুরষ্কের এমএলকেপি, পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক দপ্তরের সমন্বয়ক ডা. আয়াজ খান।