পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে। কিন্তু সড়ক বিভাগের কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে অগ্রগতি নেই। সাম্প্রতিক টানা বর্ষণের ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে হাজার হাজার খানা-খন্দ। এসব খানা-খন্দের কারণে যানবাহনের গতি কমে গেছে এবং দূরপাল্লার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানগুলো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে সময় লাগছে দ্বিগুণ। ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত যাতায়াতের সময় একটি গাড়ির জন্য যেখানে আগে ৪ ঘণ্টা লাগতো, এখন তা বেড়ে ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। সড়কের অব্যবস্থাপনা এবং খন্দের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। মহাসড়কটির বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা থেকে উজিরপুরের জয়শ্রী পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। অনেক স্থানে বিটুমিন এবং পাথরের কার্পেটিং উঠে গিয়ে কাঁদা মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে।
এদিকে সড়ক প্রশস্তকরণের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা দীর্ঘদিন ধরে অসম্পন্ন রয়েছে। কোথাও তৈরি হয়েছে কাদা। আবার কোথাও দীর্ঘদিন ধরে সড়কের একপাশ মেরামতের জন্য খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তার দুপাশে কাটা পড়ে থাকা জায়গাগুলো দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক স্থানে যানবাহন পরস্পরের পাশ কাটাতে পারছে না। ফলে মহাসড়কে চলাচলকারী ভারী যানবাহন, ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি চালিত ভ্যান এবং রিকশার মধ্যে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিনে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই এটা ব্যস্ততম ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক। তবে সড়কের এই দৈন্যদশায় দেখা মেলেনি সড়ক বিভাগের কোনো তৎপরতা। বৃষ্টি হলেই সন্ধ্যার পরে মনে হয় এক ভুতুড়ে মহাসড়ক। কাদামাটি ও খাল খন্দ দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ ও যান চালকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং যানবাহন চালকরা জানাচ্ছেন, এ অবস্থা অতি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক চালক জানান, রাস্তার ক্ষতির কারণে তাদের যানবাহন বিকল হচ্ছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তার খন্দগুলোতে পানি জমে যায়, যা দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকে আরও বৃদ্ধি করছে।
এ রুটে চলাচলকারী একাধিক পরিবহন ও ট্রাকের চালকরা জানান, মালবাহী পরিবহন, যাত্রীবাহী পরিবহনের চাকা গর্তের মধ্যে পড়ে ইঞ্জিন ও টায়ার-টিউবে সমস্যা হচ্ছে। এতে প্রতিটি ট্রিপ শেষে কোনো না কোনো যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি যাত্রীদেরও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই মহাসড়কের গর্তে পানি জমে থাকে। ফলে ঠিকমতো গর্ত দেখা যায় না। এ অবস্থায়, স্থানীয় জনগণ ও যানবাহন চালকদের পক্ষ থেকে সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি উঠেছে
মহাসড়কের মাহিলাড়া এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, মহাসড়কটি প্রসস্তকরণের জন্য সড়কের দুই পাশ দীর্ঘদিন পূর্বে কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে করে প্রতিনিয়ত এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। খানাখন্দে ভরা এ মহাসড়কে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে হেলে-দুলে হাজার হাজার যানবাহনসহ জনসাধারণ চলাচল করছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে বাজারে পণ্য আনা নেওয়ার সময় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তাঁরা সরকারের কাছে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির উন্নয়নে সড়ক বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত জুন মাস থেকে চলমান বৃষ্টি ও কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রাস্তার বেশ ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত শেষ হলেই আবার সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।