বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাঠমান্ডু থেকে অন্তরা ঢাকায় ফিরলেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মেয়েকে আনতে যেতে পারেননি তার মা। ‘আমার মা অসুস্থ। বাইরে বেশি বের হতে পারেন না। তাই বিমানবন্দরে যাননি। বাবাও কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আমি সবার সঙ্গে রিজার্ভ বাসেই চলে এসেছি’-বলছিলেন দেশের হয়ে এবারের এসএ গেমসে প্রথম পদক জেতা অন্তরা।
অন্তরারা চার বোনের তিনজনই কারাতে খেলেন। এর মধ্যে অন্তরা এবং মেজো বোন জান্নাতুল ফেরদৌস সুমী জাতীয় পর্যায়ে। দুইজনই ২০১৪ সালে চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ আনসারে। বাবার ব্যবসার সামান্য আয়ের সঙ্গে দুই বোনের আনসার থেকে প্রাপ্ত সম্মানীর টাকা যোগ হয়ে চলতো তাদের সংসার। ২০১৮ সালের পর সম্মানী বেড়েছে দুই জনেরই।
আনসারের নিয়ম অনুযায়ী, স্বর্ণ জিতলে সম্মানী সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা। অন্তরা এবং সুমী জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম স্বর্ণ জেতেন গত বছর। এর মধ্যে সুমী জুনিয়রে এবং অন্তরা সিনিয়রে। তাও জিতেছেন তিনটি স্বর্ণ। কারাতেতে অন্তরাই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি অংশ নেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তিন ইভেন্টে এবং তিন ইভেন্টেই স্বর্ণ জেতেন।
একাধিক ইভেন্টে খেলতে পারদর্শী বলেই অন্তরাকে এসএ গেমসেও তিনটি ইভেন্টে খেলিয়েছেন কারাতের জাপানী কোচ। তিনটিতেই পদক (স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ)। এবারের এসএ গেমসে ব্যক্তিগতভাবে পদক জয়ে এখনো বাংলাদেশের সেরা পারফরমার এই অন্তরা।
এসএ গেমস শুরুর আগে ক্রীড়াবিদদের অনুপ্রেরণা যোগাতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল পদকজয়ীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী- স্বর্ণের জন্য ৬, রৌপ্যের জন্য ৩ এবং ব্রোঞ্জের জন্য ১ লাখ পাবেন অন্তরা। এর বাইরে তার সংস্থা বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, ফেডারেশনসহ আরো পুরস্কার যোগ হলে অংকটা বেশ বড়ই।
পুরস্কারের এই টাকা দিয়ে কি করবেন? প্রশ্নটি করতেই এবারের এসএ গেমসে দেশের চতুর্থ এবং এখন পর্যন্ত সর্বশেষ স্বর্ণ এনে দেয়া হোমায়রা আক্তার অন্তরা শেফা মায়ের চিকিৎসার কথা বললেন প্রথমে, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। এ টাকাগুলো যদি পাই তাহালে প্রথমেই আমি মায়ের চিকিৎসা করাবো। আমরা চার বোন। আমাদের পড়াশুনা আছে। আমরা সবাই ছোট ছোট। পড়াশুনার পেছনেও এই টাকা খরচ করবো। আমরা অস্থায়ীভাবে থাকি একটা বাসা ভাড়া নিয়ে। মায়ের চিকিৎসার পর আমাদের লেখাপড়া ও থাকা-খাওয়াতেই এই টাকা খরচ করবো।’
অন্তরা এ বছর উইলস লিটন ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করে অনার্স ভর্তি হয়েছেন ঢাকা সিটি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে। মেজো বোন সুমী উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ছেন এইচএসসি প্রথম বর্ষে। ছোট দুইবোন যমজ, একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।