প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১১:৯
ইসলামের নামে রাষ্ট্র গঠনের ধারণা অনেকের মনে গভীর আগ্রহের জন্ম দিলেও ইসলাম নিজে একটি দলীয় বা রাষ্ট্রনির্ভর ব্যবস্থার পক্ষে নয়, বরং ইসলামের রাজনৈতিক দিকদর্শন একটি সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্রের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। আল্লামা ইমাম হায়াতের ব্যাখ্যায়, ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন, যা আত্মিক, মানবিক ও রাজনৈতিকভাবে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করে, তবে সেই প্রতিষ্ঠার পথ
একরৈখিক নয়। ব্যক্তিজীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের প্রয়োগের রীতি ও পদ্ধতি ভিন্ন এবং এটি জোর-জবরদস্তিমূলক নয়। ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থা কোনো একক ধর্মীয় গোষ্ঠীর নয়, বরং সকল মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানকারী একটি খেলাফতে ইনসানিয়াত, যা জীবনের মৌলিক
সত্য ও মানবিক মূল্যবোধকে ভিত্তি করে গড়ে উঠে। ইসলামের নামে কোনো রাজনৈতিক দল বা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টাকে আল্লামা ইমাম হায়াত প্রতারণা ও ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেন, কারণ তা ক্ষমতার বলয়ে ইসলামকে কুক্ষিগত করে ফেলে। কোরআন ও সুন্নাহ অনুসারে ইসলামে জবরদস্তি নিষিদ্ধ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কাউকে জোর করে ইসলাম চাপিয়ে দিতে বলেননি। বরং ইসলামে সত্য গ্রহণের পথ স্বাধীন
চিন্তা, জ্ঞান ও উপলব্ধির মাধ্যমে সুস্থ বিবেকবোধের বিকাশ। বর্তমান বিশ্বে ধর্মের নামে রাষ্ট্র গঠনের প্রতিযোগিতা যেমন সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি করে, তেমনি ইসলামের মতো সার্বজনীন ধর্মকেও দলীয় বন্দিদশায় ফেলে দেয়। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্রের উপর ইসলাম চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক ময়দানকে এমন পরিবেশে পরিণত করা, যেখানে মানুষ চিন্তার স্বাধীনতা ও চাপমুক্তভাবে সত্য
ও মানবতা উপলব্ধি করে ইসলামকে গ্রহণ করতে পারে। ইসলামের নামে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা একদিকে যেমন ইসলামকে বিকৃত করে, তেমনি অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের অনুপ্রেরণা জোগায়, যা সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়কেই সংঘাতের মুখে ঠেলে দেয়। সত্যিকার ইসলাম কোনো ভুয়া মতবাদ বা রাজনৈতিক আদর্শ নয়, বরং সকল মানুষের কল্যাণে একটি সর্বজনীন ও চিরন্তন জীবনদর্শন।