প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৩
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে জনস্রোত। শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে শুরু হয় নেতাকর্মীদের ঢল, আর দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল। দলটির দাবি অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই সমাবেশে অংশ নিতে এসেছেন। শুধু উদ্যান নয়, তার আশপাশের এলাকাও জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে।
ফজরের নামাজের পর থেকেই ছোট ছোট মিছিল আকারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। কারও হাতে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা, কারও গায়ে জামায়াতের মনোগ্রাম সংবলিত পোশাক—সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। অনেকেই দলীয় ব্যানার ও পতাকা নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন। রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়, শাহবাগ, মৎস্যভবনসহ আশপাশের এলাকায় রীতিমতো মিছিলের মিছিল।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৭ দফা দাবি আদায়ে এই জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৪ সালের ৫ আগস্টসহ পূর্ববর্তী সময়ের সকল গণহত্যার বিচার, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি। এছাড়া রয়েছে ঐতিহাসিক জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও আহত-নিহতদের পুনর্বাসনের দাবি।
এই বিশাল সমাবেশকে সফল করতে সারাদেশ থেকে আসা প্রায় ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন। ভোর থেকেই তারা হাইকোর্ট এলাকা, শাহবাগ, মৎস্যভবনসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন। কার কোথায় বসতে হবে, কোন জেলা কোন গেট দিয়ে প্রবেশ করবে—এসব নির্ধারণে স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশেই দায়িত্বে ছিলেন প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
মৎস্যভবন এলাকার স্বেচ্ছাসেবক টিম প্রধান মাসুদুর রহমান জানান, “আমরা অতিথিদের স্বাচ্ছন্দ্যে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। প্রতিটি প্রবেশপথেই স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্বে আছেন।” এমন বিশাল সমাগম নিয়ন্ত্রণে আনতে দলের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের প্রায় সব জেলা থেকেই নেতাকর্মীরা এসেছেন বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে। অনেকেই পরিবার নিয়ে এসেছেন, কেউ আবার সমাবেশস্থলের আশপাশেই রাত কাটিয়েছেন। কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা অন্তত তিন দিন আগে রওনা দিয়েছেন ঢাকার উদ্দেশে।
অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠানিকতা দুপুরে শুরু হলেও সকাল থেকেই মঞ্চের সামনে দলে দলে অবস্থান নেন অংশগ্রহণকারীরা। বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, এই সমাবেশের মাধ্যমে তারা সরকারের প্রতি গণদাবি জানাতে চান এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের বার্তা দিতে চান।
সমাবেশে নারীদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো ছিল। আলাদা নিরাপত্তাবেষ্টিত জায়গায় তাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। অনেকেই প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং দলীয় আদর্শ তুলে ধরেন।
সব মিলিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয়েছে একটি রাজনৈতিক মিলনমেলায়, যেখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ একই দাবিতে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। জামায়াতের দাবি, এ সমাবেশ রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে এবং ৭ দফা বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করবে।