এক সাথে ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করবে: সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:১৭ অপরাহ্ন
এক সাথে ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করবে: সোবহান

তিন লাখ শ্রমিক এক সাথে কাজ করবে এমন একটি শিল্পকারখানা গড়ার আশ্বাস দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি বলেছেন, একটু আগে অর্থমন্ত্রীর সাথে আমার আলাপ হচ্ছিল। তিনি আমাকে বলেছেন, আপনি এমন একটা শিল্প করেন যেখানে তিন লাখ শ্রমিক এক সাথে কাজ করবে। আমি উনাকে আশ্বাস দিয়েছি, ইনশাল্লাহ আপনিই সেই কারখানার উদ্বোধন করবেন। 

আজ শনিবার রাজধানীর অদূরে কেরাণীগঞ্জের পানগাঁওয়ে স্থাপিত দেশের প্রথম বেসরকারি বিটুমিন কারখানা 'বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট' উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারি-বেসরকারি নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে গতি আনতে বেসরকারি পর্যায়ে বিটুমিন উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আজ শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় পবিত্র কোরআন তেলায়াতের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। একে একে বক্তব্য রাখেন উপস্থিত অতিথিরা।   

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান তানভীর, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সানভীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এবং ওয়ালিদ সোবহান। 

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত, ধন্য যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব সবাই আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাকে সহযোগিতা উদ্দেশ্য কিন্তু আমাকে না, প্রতিটা লোক জানে আমরা বাংলাদেশে এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন গড়তে চেষ্টা করছি। এ দেশের অর্থনীতি ভালো করতে চেষ্টা করছি। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন ঢাকা ও কক্সবাজারে দুটো বঙ্গবন্ধু জাদুঘর হচ্ছে। আজকের শিশুরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। আমি আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হলে ঢাকা ও কক্সবাজারে দুটো জাদুঘর হবে। সেই সাথে সব মাধ্যমের শিশুরা যাতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হবে।

তিনি বলেন, আরেকটা কথা বলি, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে উৎসাহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর কাছে ১৫ একর জায়গা চেল, তিনি বললেন, ১৫ একরে বিশ্ববিদ্যালয় হয় নাকি। তিনি কেরানীগঞ্জে ১০০০ বিঘা জায়গা দিয়েছেন। ৩০০ একর জায়গার ওপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। 

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সকল উৎসাহ-উদ্দীপনার মূল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনি সব সময় সকল ক্ষেত্রে আমাদের উৎসাহ দেন; তোমরা শিল্পকারখানা কর, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাও, আমি তোমাদের পাশে আছি। আমাদের ছেলেরা বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে আবার দেশে কেন আসছে, কেননা এ দেশে ব্যবসা করার পরিবেশ আছে। গত পাঁচ বছরে আমরা একটা হরতাল দেখিনি, অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা দেখিনি। একটা সময় গিয়েছে আমারা প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম কবে হরতাল বন্ধ হবে কবে অবরোধ বন্ধ হবে কবে জ্বালাও পোড়াও বন্ধ হবে! সেই অবস্থা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিত্রাণ দিয়েছেন। সারা দেশ সারা জাতি উনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের কৃতজ্ঞতার ভাষা নেই। আজকে যাঁরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, ব্যবসা করে ধনী হচ্ছেন- সবই তাঁর অবদান। 

তিনি আরও বলেন, একটা সিদ্ধান্তে এ দেশের রেমিটেন্স ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী একটা সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁরা বললেন ২ শতাংশ ইনসেনটিভ দেব। সাথে সাথে রেমিটেন্স ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল। আমি শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীকে একটা অনুরোধ করব। আপনারা শুধু হুন্ডি বন্ধ করেন। রেমিটেন্স বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। প্রতি মাসে তিন বিলিয়ন ডলার এ দেশে আসবে। 

বসুন্ধরা গ্রুপ চেয়ারম্যান বলেন, একটু আগে অর্থমন্ত্রীর সাথে আমার আলাপ হচ্ছিল। তিনি আমাকে বলেছেন, আপনি এমন একটা শিল্প করেন যেখানে তিন লাখ শ্রমিক এক সাথে কাজ করবে। আমি উনাকে আশ্বাস দিয়েছি, ইনশাল্লাহ আপনিই সেই কারখানার উদ্বোধন করবেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, ধন্য যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব সবাই আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাকে সহযোগিতা উদ্দেশ্য কিন্তু আমাকে না, প্রতিটা লোক জানে আমরা বাংলাদেশে এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন গড়তে চেষ্টা করছি। এ দেশের অর্থনীতি ভালো করতে চেষ্টা করছি। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন ঢাকা ও কক্সবাজারে দুটো বঙ্গবন্ধু জাদুঘর হচ্ছে। আজকের শিশুরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। আমি আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় হলে ঢাকা ও কক্সবাজারে দুটো জাদুঘর হবে। সেই সাথে সব মাধ্যমের শিশুরা যাতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হবে।

পরিশোধিত ক্রুড অয়েলের উপজাত থেকে তৈরি বিটুমিন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। আর বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমদানি করা বিটুমিনের ওপর নির্ভরশীল। দেশে বিটুমিনের মাসিক চাহিদা ৪২ হাজার টন। এই চাহিদা প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্ট এককভাবে বছরে সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন বিটুমিন উৎপাদন করতে পারবে। ফলে সরকারের বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে একই সঙ্গে সময়মতো চাহিদার জোগান এবং গুণগত মান নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে বসুন্ধরা গ্রুপই দেশে প্রথমবারের মতো বিটুমিন উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কারখানায় উৎপাদিত বিটুমিন মানগত দিক দিয়ে সাধারণ বিটুমিনের চেয়ে আরো উন্নত হবে। এটি হবে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডের বিটুমিনের সঙ্গে তুলনীয়। এ ছাড়া ক্রেতার চাহিদামতো গ্রেড ও মানের বিটুমিন সরবরাহ করা যাবে।

বসুন্ধরা বিটুমিন কারখানাটি স্টেট অব আর্ট অবকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে রয়েছে উন্নত মানের সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা। ক্রেতাকে চাহিদা অনুয়ায়ী সময়মতো ড্রাম বা বাল্ক আকারে বিটুমিন সরবরাহ দেওয়ার জন্য কারখানা এলাকায় দক্ষ ও মানসম্পন্ন সুযোগ-সুবিধার অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন কারখানাটি চাহিদা অনুযায়ী উন্নত গ্রেডের বিটুমিন উৎপাদন করবে। কাটব্যাক, এমালসিফাইড, অক্সিডাইজড ও পলিমারসহ (এসবিএস, রাবার পাউডার) ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও সরবরাহে সক্ষম এই প্লান্ট।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি অভ্যন্তরীণভাবে কিছু বিটুমিন উৎপাদন করে। চাহিদার বাকি ৯০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর আমদানি করা বিটুমিনের মান নিয়ে প্রশ্ন আর অভিযোগ উঠেছে বারবার। বলা হয়েছে, নিম্নমানের হওয়ায় এসব বিটুমিন সড়কে ব্যবহারের পর তা টেকসই হচ্ছে না। এতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থের সদ্ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। আবার সরকারকে চাপে পড়ে আবার নতুন প্রকল্পও নিতে হয় মাঝেমধ্যে। এ অবস্থায় দেশেই সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন বিটুমিন উৎপাদনের পরিকল্পনা পুরো অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ইতিবাচক বড় ভূমিকা রাখবে। আর বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টটিও স্থাপন করা হয়েছে সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে। এখানে আদর্শ বিপণন ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। বিটুমিনের পাশাপাশি এই প্লান্টে জ্বালানি তেলসহ কিছু বাই-প্রডাক্টও উৎপাদন করা হবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ হিসেবে বসুন্ধরা এরই মধ্যে সিমেন্ট, পেপার, টিস্যু, এলপিজি উৎপাদন ও বিপণন, জ্বালানি এবং ট্রেডিং খাতে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত বসুন্ধরা বিটুমিন প্লান্টও রপ্তানিনির্ভরতা দূর করে অভ্যন্তরীণ চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন করে বিদেশে বিটুমিন রপ্তানিতে উদ্যোগী হবে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর