ভারতের হলদিয়ায় মা ও মেয়েকে খুনের ঘটনায় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিশ। খুনের আগে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় রিয়াকে। পুলিশের দাবি, রিয়াকে বিয়ে করার পরেও মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সাদ্দামের। তার ফলে ক্রমশই রিয়া, তাঁর মা রমা এবং সাদ্দামের সম্পর্কের জটিলতা তৈরি হয়। সেই জটিলতা কাটাতেই মা-মেয়েকে খুনের ছক কষে সাদ্দাম। হলদিয়ার দুর্গাচকের ভাড়াবাড়িতে ডেকে নেয়া হয় তাঁদের।
খুনের আগে রিয়াকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয়। তবে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে দোতলার ছাদ থেকে নিচে ঝাঁপ দেন ওই তরুণী। চোখের সামনে মেয়েকে ঝাঁপ দিতে দেখে শান্ত থাকতে পারেননি মা রমাও। তিনিও চিৎকার করতে শুরু করেন। তাই সেই মুহূর্তেই রিয়া এবং রমাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করে সাদ্দাম। খুনের পর প্রমাণ লোপাট করতে দু’জনের দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এদিকে এই ঘটনায় আমিনুর হোসেন নামে আরও একজনকে মুম্বাইয়ের গোরেগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হলদিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিকুড়খালি এলাকায় দু’টি অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই দেহ দু’টি রিয়া এবং রমা নামে দুই মহিলার। যাঁরা সম্পর্কে মা এবং মেয়ে। তদন্তকারীরা প্রথমে মনজুর আলম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই একে একে সামনে আসে সাদ্দাম হোসেন, শুকদেব দাস এবং আমিনুর হোসেনের নাম। তাদের প্রত্যেককেই জেরা করছে পুলিশ। ধৃতদের জেরা করেই নতুন নতুন তথ্য হাতে আসছে তদন্তকারীদের। বাংলা মাধ্যম একটি স্কুলে ২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন রিয়া। তবে ইংরাজি এবং হিন্দি ভাষাতেও সমান সাবলীল ছিলেন তিনি। তাই বাংলা, ইংরাজি এবং হিন্দি তিনটি ভাষাতেই ডায়েরি লিখতে অভ্যস্ত ছিলেন রিয়া।
তার ডায়েরি পড়ে পুলিশ জানতে পারে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই সাদ্দামের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রিয়া। দুর্গাচকের নিউ কলোনিতে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকত সাদ্দাম। সেখানে প্রায়ই আসা যাওয়া লেগে থাকত রিয়া এবং তাঁর মা রমার। কয়েকদিন প্রেমের পর ২০১৮ সালে আইন মেনে বিয়েও করেন রিয়া এবং সাদ্দাম। ডায়েরিতে সেকথাও উল্লেখ করেছেন রিয়া।
বিয়ের পরেই রিয়া তাঁর মাকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন। ভাবতে শুরু করেন, তাঁর মা রমা ক্রমশ সাদ্দামের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন। সাদ্দামের সঙ্গে মায়ের ঘনিষ্ঠতা ভাল চোখে মোটেও দেখছিলেন না রিয়া। বিভিন্নভাবে সেকথা মাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রিয়া।
এদিকে সাদ্দামও সন্দেহ করতে শুরু করেছিল রিয়া এবং রমা দু’জনেই অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে। তা বোঝার পরই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানায় সাদ্দাম। এরপরই মা-মেয়ে দু’জনেই ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে সাদ্দামকে।
তাই রিয়া এবং রমার সঙ্গে সাদ্দামের তিক্ততা ক্রমশই বাড়ছিল। এরপরই হলদিয়ায় ডেকে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয় রিয়া এবং রমাকে। বাসুদেবপুরের ভাড়াবাড়িতেই রিয়া এবং রমাকে খুন করে সাদ্দাম। শ্বাসরোধ করে তাদের খুনের পর রমার দেহ একটি কম্বলে জড়িয়ে গাড়ির ডিকিতে রাখা হয়। একটি ব্যাগের ভিতরে ঢুকিয়ে রিয়ার দেহ রাখা হয় গাড়ির পিছনের সিটে।
সাদ্দামের বন্ধু মনজুরের বাড়ি হলদিয়ার ঝিকুরখালিতে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই ঝিকুরখালির কাছে হুগলি নদীর চরে নিয়ে আসা হয় মা-মেয়ের দেহ। এরপর প্রমাণ লোপাট করার জন্য পুড়িয়ে দেওয়া হয় দু’টি দেহ। শুকদেব এবং মনজুর দু’জনেই সাদ্দামকে খুনের প্রমাণ লোপাটে সাহায্য করেছিল বলেই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে নিয়েছে। সাদ্দাম, মনজুর, শুকদেবকে মুখোমুখি বসিয়ে আগেই জেরা করেছে পুলিশ। এবার সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া আমিনুর হোসেনকেও তাদের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের ভাবনাচিন্তা চলছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।