ভারতের দিল্লির পরিস্থিতি এখনো থমথমে। সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। দিল্লিতে সংঘর্ষ থেমেছে। পুলিশের আশ্বাসে রাস্তায় বের হচ্ছে দিল্লির বাসিন্দারা। কিন্তু ভয় কাটেনি। হাতেগোনা দোকান-পাটও খুলছে। কিন্তু তাঁদের আতঙ্ক কাটাতে বিভিন্ন রাস্তায় এখনও মার্চ করছে আধা সামরিক সেনা।
দুদফায় মোট দশ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা শিথিল করা হয়েছিল। শুক্রবারও হাসপাতালে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে দিল্লি সংঘর্ষে হাহাকারের মধ্যেই সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ছবি উঠে এল পুরনো মুস্তাফাবাদের বাবুনগরে। মুসলিম অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে শিব মন্দির রক্ষায় ত্রাতা হয়ে উঠলেন মুসলিমরাই। আশেপাশের অঞ্চলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ভয়ঙ্কর রূপ নিলেও এই অঞ্চলের বাসিন্দারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রুখে দিয়েছেন সংঘর্ষ।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দেশবন্ধু কলেজের ছাত্র মহম্মদ হাসিন বলেন, ‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমরা চেয়েছিলাম সব সময়েই ঐক্যবদ্ধ থাকতে। যাতে হিংস্র জনতার মোকাবিলা করা যায়।’ যে কোনও মূল্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সৌভ্রাত্র অটুট রাখাই ছিল তাঁদের সংকল্প। সে জন্যে মন্দির বাঁচাতে ওই কয়েকটা দিন পালা করে নজরদারি করেছেন তাঁরা।
‘দুই ধর্মের মানুষই ছোট ছোট দল তৈরি করে সতর্ক থেকেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাতে তুলে নিয়েছিলাম লাঠি।’ মন্দির থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকেন কামরুদ্দিন। স্থানীয় চায়ের দোকানে খাবার সরবরাহ করে পেট চলে তাঁর।
কামরুদ্দিনের গলাতেও সম্প্রীতির সুর। ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা একসঙ্গে রয়েছি। কখনও সংঘর্ষের কথা ভাবতেই পারিনি। এই কঠিন সময়ে মানবতা রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ জ্বলে গেছে জানি, কিন্তু মন্দিরে কোনও আঁচ লাগতে দেব না।’
গত ৩০-৩৫ বছর ধরে মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক রীনা (৫২)। দৈনন্দিন পূজার সমস্ত দায়িত্বই তাঁর। এই বিপদের সময়ে তিনিও ধর্ম বিচার না করে আস্থা রেখেছেন ভিন্ ধর্মের ভাইদের উপরেই। তুলে দিয়েছেন মন্দিরের চাবি।
‘ওরা তো নিজেদেরই লোক। গত কয়েক দিন মন্দিরে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম, ওরা থাকতে মন্দিরের কোনও ক্ষতি হবে না। এত দিন একসঙ্গে রয়েছি। পরিস্থিতি খারাপ বলে কী সব বদলে যাবে? আমরা পৃথক ভাবে ধর্মাচরণ করলেও ঈশ্বর তো একই,’ বলেন রীনা তাই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলেও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নন ৫২ বছরের এই নারী।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।