ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লিঙ্গান্তরিত নারী-পুরুষ তিস্তা দাস ও দীপন চক্রবর্তীর বিয়ে হচ্ছে। তারা দু’জনই জন্মের সময় ছিলেন বিপরীত লিঙ্গের। কিন্তু জন্মের পর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন খেয়াল করলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গান্তরিত হন তার। পুরুষ হয়ে জন্ম নেয়া কনে তিস্তা দাসের নাম ছিল সুশান্ত। অপরদিকে, নারী হয়ে জন্ম নেয়া দীপন চক্রবর্তীর নাম ছিল দীপান্বিতা। রূপান্তরিত নারী ও পুরুষের মধ্যে বিয়ের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম। জন্মসূত্রে সুশান্তের তিস্তা হয়ে উঠতে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। পনেরো বছর আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের লিঙ্গান্তর সম্পূর্ণ হয়। তিস্তা দাস নিজেকে কবি, বুটিক শিল্পী, সমাজকর্মী বহুমুখী পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
অপরদিকে, দীপান্বিতা নামে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া বর দীপন চক্রবর্তী বেড়ে ওঠেন আসামে। জন্মের পর দেখেন তার শরীরের সমস্ত বৈশিষ্ট পুরুষের মতো। তাই বিষয়টি সবসময় ভাবিয়ে তোলে তাকে। নিজের নারী-শরীরের পুরুষ সত্তা থেকে মুক্তি পথ খুঁজছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে তিস্তার সঙ্গে বেশ নাটকীয়ভাবে পরিচয় হয় দীপনের। কলকাতার আগরপাড়ায় তিস্তা দাসের নিজের একটি লিঙ্গান্তর সংস্থা আছে। সেখানেই এক অনুষ্ঠানে দু’জনের পরিচয়। বছর চল্লিশের এই দু’জন জানতে পারেন যে, তারা উভয়ই লিঙ্গান্তর করেছেন।
দু’জনের বয়স কাছাকাছি হলেও কেউ কাউকে নিজেদের মনের কথা বলতে পারছিলেন না। অবশেষে তিস্তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে প্রেমের কথা জানান দীপন। তিস্তার মনেও ছিল একই অনুভূতি। সেই থেকে যুগলের প্রেম শুরু হয়। অবশেষে সোমবার (৫ আগস্ট) তাদের বিয়ে হচ্ছে। সোমবার হিন্দুশাস্ত্রমতে তাদের বিয়ে হবে কলকাতাতে। আগামী ৭ আগস্ট হবে বউভাতের অনুষ্ঠান। দীপন কলকাতার গড়িয়ায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন। বিয়েতে তার বাবা-মা আসেননি। তবে অন্য আত্মীয়স্বজনদের কেউ কেউ বিয়েতে থাকছেন।
নিজের বিয়ে নিয়ে তিস্তা বলেন, দীপনকে দেখে ভেবেছি, ভালোবাসা শুধু দু’টি মনের ব্যাপার। দীপনও বিয়ে নিয়ে বেশ খুশি। তিনি বলেন, আমার কাছে পৌরুষত্ব মানে জেদাজেদি নয়, একটা মেয়েকে বোঝা, তাই এতদিন অপেক্ষা করেছি। ২০১৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশটিতে রুপান্তরকারী মানুষদের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে রুপান্তরকারী মানুষের মধ্যে এটাই প্রথম বিয়ের ঘটনা। সম্প্রতি দেশটির কেরালা রাজ্যে এরকম একটি জুটির বিয়ে হয়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।