সীমান্তবর্তী ভারতীয় গ্রাম কোইউল ঢুকে পড়েছিল চীনা সেনাবাহিনী। চীন-ভারতকে বিভক্তকারী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) থেকে গ্রামটি চল্লিশ মিনিটের পথ। রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিকের খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ছয় কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে তিব্বতীয় আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামার জন্মদিনের একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বাধা দিয়েছে চীনা সেনাবাহিনী। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের ওই গ্রামটিতে তিব্বতীয় আধ্যাত্মিক নেতার জন্মদিন পালন করা হচ্ছিল। তাতে এতে বাধ সাধে চীনের সেনাবাহিনী। পরবর্তী সময়ে পূর্ব লাদাখের ডেমচকের কাছের কোইউল গ্রামটি থেকে চলে যাওয়ার আগে তারা চীনা পতাকা উত্তোলন করেন। ভারতীয় সরকারের সূত্র জানায়, দুটি গাড়িতে করে ১১ চীনা সৈনিক এলএসি থেকে চল্লিশ মিনিট দূরের গ্রামটিতে থামেন। দোকালাম সংকটের বছর দুয়েক পর নতুন এই ঘটনাটি ঘটল।
এ ঘটনা সম্পর্কে অবগত সরকারি সূত্র শুক্রবার জানায়, গাড়িতে করে সাদা পোশাকের সেনা সদস্যরা এলএসিতে আসেন। গত ৬ জুলাই তিব্বতীদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামার জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানের প্রতিবাদ জানান তারা। চীনা সেনারা গ্রামবাসীকে একটি ব্যানার দেখান, যাতে লেখা ছিল, তিব্বতকে বিভক্ত করে এমন সব তৎপরতা নিষিদ্ধ। কোইউল গ্রামের প্রধান উরগেইন চন্দন ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক সদস্য বলেন, কোইউল, ডেমচক ও দাঙ্গতির লোকজন যখন দালাইলামার জন্মদিন পালন করছিলেন, তখন চীনা সেনাবাহিনী ভারতীয় ভূখণ্ডের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে চলে আসেন। উরগেইন চন্দন বলেন, দালাইলামার জন্মদিন পালন এখানে একটা প্রথা। বহু বছর থেকে তার জন্মদিনে উৎসব হয়ে আসছে। তবে ওইদিন আমরা জাতীয় পতাকা, বৌদ্ধ পতাকা ও তিব্বতের পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। এসময় চীনা সৈনিকরা আমাদের ভূখণ্ডের ছয় কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসেন। ‘তারা বলেন, আমরা তাদের ক্ষুব্ধ করেছি। তারা আমাদের পতাকা উত্তোলন করতে না করেন।’
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে জানিয়ে চিঠি দেয়ারও কথা বলেছেন ওই গ্রামপ্রধান। লাদাখ স্বায়ত্তশাসিত পাহাড় উন্নয়ন পরিষদের প্রধান নির্বাহী কাউন্সিলর রিগজিন স্পালবার বলেন, চীনের এই হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। স্পালবার বলেন, চীনাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে সত্য গোপন করলে তাদের সাহস আরও বেড়ে যাবে। চীনা সেনাদের উদ্দেশ্য নিয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ভারতীয় নেতারা বলেন, যখন তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের সুযোগ আছে, তখন সশরীরে তাদের আসতে হবে কেন? আমাদের ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আগেই জানানো উচিত ছিল তাদের। তারা বলেন, এর পেছনে তাদের গোপন উদ্দেশ্য আছে। তা হচ্ছে, তারা আমাদের শীতকালীন পশু চারণভূমি দখল করতে চায়। যেখানে আগে আমাদের পূর্বপুরুষ এবং বর্তমানে আমরা সব চ্যাংপারা (আধা-যাযাবর তিব্বতীয়) শীতকালে পশুদের ঘাস খাওয়াই।
চলতি বছরের শুরুতে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে চীনা সেনাবাহিনী একটা সড়ক নির্মাণ করছে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এতে বাধা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কারণ চ্যাংপা ও তাদের গবাদিপশুগুলোর টিকে থাকার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে সিকিম সেক্টরে ৭৩ দিনের দোকালাম অচলাবস্থার পর এই চীনারা ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেন। দোকালাম সংকটের কারণে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটেছিল। তখন সশস্ত্র লড়াইয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল দুই পক্ষ। ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক উহান সম্মেলনের পর দুই পক্ষের উত্তেজনা কিছুটা কমে আসে।
অতীতের এই অচলাবস্থার দরুন ডেমচকে শতাধিক যুদ্ধ ট্যাংক মোতায়েন করেছে ভারতীয় সরকার। ২০১৬ সালে ডেমচকের পূর্ত কাজ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেছেন অর্ধশতাধিক চীনা সৈনিক। চীন সরকারের দাবি ছিল, বিতর্কিত অঞ্চলে ওই উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। কাজেই এতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার দরকার ছিল। ২০১৩ সালে এক ডজনেরও বেশি চীনা সেনা এলএসি অতিক্রম করে ডেমচোকে ঢুকে পড়েন। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় তারা সেখানে অবস্থান করেছিল।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।