শীতের দিনে চা খাওয়ার আনন্দ: আশাশুনির চায়ের দোকানের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৭ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
শীতের দিনে চা খাওয়ার আনন্দ: আশাশুনির চায়ের দোকানের গল্প

এবারের জানুয়ারিতে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে আশাশুনিতে। উপজেলার গ্রামাঞ্চল থেকে শহরের মোড়ে মোড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঠান্ডার দাপট, আর সেই সঙ্গে বেড়ে গিয়েছে চা খাওয়ার চাহিদা। চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় জমাতে শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা, আর কেউ কেউ চায়ের স্বাদ নিতে মটরসাইকেল নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন। আশাশুনির বিভিন্ন জায়গায় চায়ের দোকানগুলোতে এই শীতের দিনে জমে উঠেছে এক আলাদা আড্ডা। 


বিশেষত, বুধহাটা বাজারের গাজী মার্কেটে কালামের দুধ চায়ের কদর বেড়েছে শীতে। শীতের সকালে বা সন্ধ্যায়, সেখানে চা খেতে আসেন অনেকেই। কালামের দোকানে দুধ চায়ের এক চমৎকার স্বাদ, যা মানুষকে আকর্ষণ করে। দোকানের বাইরের ভিড় তার জনপ্রিয়তা আর প্রমাণ করে।


এছাড়া, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চায়ের দোকানগুলো সুনাম অর্জন করেছে। বুধহাটা বাজারের করিম মার্কেট, কুল্যার মোড়, গুনাকরকাটি, আশাশুনি, ব্যাংকদহা, কালিবাড়ী—এসব এলাকায় চায়ের দোকানে সব সময়ই ভিড় থাকে। এখানকার দোকানগুলোতে চায়ের বিশেষ রকমফেরও রয়েছে, যা আকর্ষণ করে ক্রেতাদের।


মাধবের চায়ের দোকানটি বেশ বিখ্যাত। বুধহাটা খেতুর তলা মোড়ে ঠাকুর মার্কেটে মাধবের রং চায়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মাধবের চা খেতে আসে বহু মানুষ, আর তাদের মতে, মাধবের চায়ে অপূর্ব স্বাদ রয়েছে। অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হলেও, চা খেতে আসা মানুষরা রোজ এখানেই আসেন। মাধবের দোকানে চায়ের দাম অনেকটা সস্তা, এবং এখানকার চা ক্রেতাদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়।


এছাড়া, মান্নানের দোকানেও চায়ের কদর রয়েছে। আশাশুনির বুধহাটা বাজারের ঠাকুর মোড়ে মান্নান চায়ের দোকানটি সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তার চায়ের দোকানে ৫ টাকার লাল চা পাওয়া যায়, যা অনেকের কাছে প্রিয়। তার দোকানে রোজ ভিড় থাকে, বিশেষত শীতের সময়ে। 


চায়ের দোকানে চা খেতে আসা ক্রেতারা নিজের গল্প করতে করতে চায়ের মজা উপভোগ করেন। কুল্যার বাসিন্দা কিনু বলেন, গরমের দিনেও তারা চা খান, তবে শীতে চা খাওয়ার মজাটাই আলাদা। শীত পড়লে, চায়ের কাপ হাতে কাঁপতে কাঁপতে চা খাওয়ার অনুভূতি আর অন্যরকম।


এছাড়া, চায়ের দোকানগুলোতে মাটির ভাঁড়, কাচের গ্লাস কিংবা প্লাস্টিক কাপেও চা পাওয়া যায়। চায়ের দামও সাধারণত সস্তা থাকে, আর সেজন্য এটি বিক্রেতাদের জন্য লাভজনক হয়। আশাশুনির চায়ের দোকানগুলোতে লাল চা এবং দুধ চায়ের বেশ সমাদর রয়েছে।


কালাম বলেন, "২০ বছর ধরে এই চায়ের দোকান করছি। আমাদের দোকান সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, আর এখানকার চায়ের স্বাদ অনেক দূর থেকে মানুষ এনে খাচ্ছেন।" তিনি আরও বলেন, "শীতে চা খাওয়া অন্যরকম, এবং ক্রেতারা এর স্বাদ নিতে আসেন।"


এছাড়া, দেবব্রত বসাকের মতো চা পিয়াসীও মাধবের চায়ের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, "মাধবের চায়ের জুড়ি নেই। দিন দিন তার চায়ের স্বাদ এবং গুণমান আরও ভালো হচ্ছে।"


এইসব চায়ের দোকানগুলোতে একদিকে যেমন শীতের কনকনে ঠান্ডার মধ্যে চা খাওয়া এক অভূতপূর্ব অনুভূতি, তেমনি এরা স্থানীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আশাশুনির চায়ের দোকানগুলোতে প্রতিদিন যেন এক নতুন রকমের গল্প জমে ওঠে, আর সেখানে চা খেতে আসা মানুষরা নিজেদের জীবনঘটনাগুলো শেয়ার করেন। 


এইভাবে, আশাশুনির চায়ের দোকানগুলো শীতের দিনে স্থানীয় মানুষের প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। শীতের সকালে চায়ের কাপ হাতে জমে উঠা আড্ডা, গল্প এবং বন্ধুদের সাথে চা খাওয়ার এক বিশেষ মজাই রয়েছে।