কুমিল্লার দেবীদ্বারে বৈষম্যবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৪০ দিন পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে সাব্বির হোসেন (১৭)। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন ধরে চিকিৎসাধীন সাব্বিরের মৃত্যুতে তার পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সাব্বিরের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার সময় সাব্বির মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। আন্দোলন চলাকালীন স্বৈরাচারী সরকারপন্থী সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলি ছোঁড়ে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সাব্বিরকে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং তার মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, পরে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
দুর্ঘটনার পরই তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকার গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গতকাল শুক্রবার তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। শনিবার সকালে হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলে দ্রুত তাকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাব্বিরের মামা নাজমুল হাসান শোক প্রকাশ করে বলেন, "আমার ভাগিনা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। কিন্তু সেই লড়াইয়ের মূল্য তাকে জীবন দিয়ে দিতে হলো। প্রশাসনের কাছে আমরা এর সুবিচার চাই।"
সাব্বিরের মৃত্যুতে তার মা রীনা বেগম শোকে মুষড়ে পড়েছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সাব্বির, যে তার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মা, দুই ছোট ভাই-বোন সিয়াম (১১) ও সামিয়া (৬) তার উপরই নির্ভরশীল ছিল। এখন তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। এলাকাবাসীও গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছে।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, সাব্বিরের মৃত্যুর পর মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে চাওয়া হলে স্থানীয়রা তাতে বাধা দেয়। সার্কেল এসপি শাহ মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান বলেন, "নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেয়ার চেষ্টা করা হলেও স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।"
সাব্বিরের জানাজা শনিবার বাদ আসর ভিংলাবাড়ি ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এবং পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।