প্রকাশ: ৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:১১
নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী এক মহা সংকটের নাম। সারা বিশ্ব আজ স্থবির হয়ে গেছে।কভিড-১৯কে ইতিহাসের যে কোন সংকটের চেয়ে বড় সংকট বললে ভুল হবেনা। ১৫ লক্ষের অধিক মানুষ ইতিমধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছায় বেকারত্বের মধ্যে ঢুকতে হয়েছে কোটি কোটি মানুষকে। একদিকে স্বজন হারানো কস্ট, অর্থনৈতিক সংকট,হতাশা,অন্যদিকে প্রতি নিয়ত অজানা এক আতংকের মধ্যে আজ সারাবিশ্বের মানুষ। এই সংকট যে কবে শেষ হবে একমাত্র মহান আল্লাহ ভালো জানেন।
এই অবস্থায় সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ও সাহসিকতার সাথে আমাদের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সাহায্য চাইতে হবে। কারন তিনি একমাত্র সাহায্যকারী,বিশ্ব নিয়ন্ত্রক।মহান আল্লাহ বলেছেন- হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহা্য্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।(সূরা বাক্বারা,আয়াতঃ১৫৩) বিপদ আপদ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ । আল্লাহ বলেন-“আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়ভীতি, ক্ষুধা, জীবন-সম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা, আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)।
এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে বিপদে আক্রান্ত করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪৫) আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতে তার শাস্তি ত্বরান্বিত করেন, আর যখন কোনো বান্দার অকল্যাণ চান তখন তার পাপগুলো রেখে দিয়ে কিয়ামতের দিন তার প্রাপ্য পূর্ণ করে দেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬) তবে কঠিন বিপদেও যারা সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো! হে মুমিন বান্দা, যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। যারা এ দুনিয়ায় ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, শুধু ধৈর্যশীলদেরই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ১০)
তাই সকল বিপদ আপদে আমাদের সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারন করতে হবে। সকলকে একটি কথা মনে রাখতে হবে মানুষের জীবনের সব সময় এক রকম যায়না। সুখ- দুঃখ, হাসি- কান্না নিয়ে আমাদের জীবন।আজকের এই সংকটের সময় সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে। এই সময়টাতে পরিবারের পক্ষ থেকে সাহস দেয়া,পাশে থাকা অত্যন্ত জরুরী। কারন অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী লোকটিকে হারিয়ে এখন দিশেহারা, অনেকে তার কর্মক্ষেত্র থেকে ছিটকে গেছে, অনেকে তার একমাত্র ব্যবসায়ের মূলধন হারিয়ে ফেলেছে, অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। করোনাকালীন সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ মধ্যবিত্ত মানুষ গুলো।
তারা না পারছে তার অভাব মোচন করতে না পারছে কারো কাছে সহযোগিতা চাইতে। এই সময় বিত্তবান আত্মীয় স্বজনদের উচিত তার নিকটাত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর রাখা। সকলকে মনে রাখতে হবে খারাপ সময় গুলো এক সময়ে চলে যাবেই। হতাশ হয়ে এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবেনা যেটা আপনার জীবন নাশের কারন হবে, মনে রাখতে হবে জীবনে ধাক্কা না লাগলে জীবন পরিপূর্ণ হয়না। মনে রাখতে হবে এটা একটা যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে। যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানো সহজ কিন্তু! যুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন। যদি কস্ট করে একবার যুদ্ধে জয়ী হতে পারেন সারাবিশ্ব আপনাকে মনে রাখবে সারাজীবন। আর যদি আপনি যুদ্ধে হেরে যান মানুষ আপনাকে মনে রাখবে মাত্র ৪০ দিন তাও কাপুরুষ হিসেবে। তাই আমাদের মনে সাহস রাখতে হবে, মনে জোড় সঞ্চার করতে হবে,বিত্তশালীকে চিত্ত দিয়ে কাজ করতে হবে। মোট কথা সবাইকে ধৈর্য্য ধারন করে সাহসিকতার সাথে এই বিপদ তথা সংকটকে মোকাবিলা করতে হবে।
মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক সুমন