পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছিল দেশের পেঁয়াজের বাজার। কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যায়। এদিকে চলতি বছর অতিবর্ষণ, জোয়ারের পানি উঠে জলাবদ্ধতাসহ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তাই সংকট মোকাবিলায় এবার পেঁয়াজ চাষে গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। চলতি বছর বরিশালের ১০ উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সূত্রমতে, দেশের অন্যান্য স্থানের মত বরিশালেও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। ২০১৯ সালের শেষদিকে এবং চলতি বছরের গত ২ মাস যাবত অস্থিরতা বিরাজ করছে বরিশালের পেঁয়াজের বাজারে। তবে বাজারের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। অবশ্য তাতে বরিশালের পাইকারী এবং খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সিন্ডিকেটের পাশাপাশি বরিশালের স্থানীয় পর্যায়ে নানা প্রতিকূলতার কারণে পেঁয়াজের আবাদ এবং উৎপাদন কম হওয়ায় বরিশাল বিভাগে পেঁয়াজ চাষ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকেই পেঁয়াজ চাষ বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বরিশালের ১০ উপজেলাসহ বিভাগের ৬ জেলায়। পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত কৃষকদের দিয়ে কার্যক্রম চলছে পেঁয়াজ ও মশলা জাতীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির। গতবছরের রবি মৌসুম থেকেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ চাষে উপযুক্ত মাটির অভাব রয়েছে বরিশালে। চেষ্টা করেও কাঙ্খিত ফসল না পাওয়ায় পেঁয়াজ চাষে অনেকটাই অনাগ্রহী স্থানীয় কৃষকরা। তবে সরকারি প্রণোদনা এবং প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশালে পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বীজ ও উপকরণ সরবরাহ করছেন। পাশাপাশি ফসল চাষে মাঠ নির্ধারণেও কাজ করছেন তারা।
সূত্র জানায়, বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৯ সালের রবি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ হাজার ১০৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। ১০ উপজেলার আবাদ মিলিয়ে কেবলমাত্র ১২৮ হেক্টর জমির ফলন পাওয়া গিয়েছিল পেঁয়াজের। পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা মিলিয়েও তার অর্ধেকও হয়না উৎপাদন। এসব কারণ বিবেচনায় অন্তত ১৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশালে পেঁয়াজ চাষ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, গড়ে তোলা হচ্ছে দক্ষ চাষী। চলতি বছর বরিশালের ১০ উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ফলে বরিশালে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তৌফিকুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত মাটি প্রয়োজন। তবে বরিশাল অঞ্চলে এমন মাটির অভাব রয়েছে। তাছাড়া পেঁয়াজ চাষে কম আগ্রহী বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগের ৬ জেলায় পেঁয়াজ চাষ বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আর্থিক প্রণোদনা ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত কৃষকদের দিয়ে পেঁয়াজ ও মশলা জাতীয় কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম চলছে।
তিনি বলেন, গত বছর অতিবর্ষণ, ক্ষেতে জোয়ারের পানি উঠে জলাবদ্ধতা, প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সব প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ১০ উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের যে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা এ বছর পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।