পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম হত্যা মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখে প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা পরিচালকের কক্ষে তালা মেরে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এতে কয়েক ঘণ্টা ধরে ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা।বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সবধরনের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। বেলা সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখা শুরু হয়। তবে পরিচালক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা তখনও প্রশাসনিক ব্লকে তাদের কক্ষে অবরুদ্ধ ছিলেন।
আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসার নামে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।আন্দোলনকারীরা জানান, ডা. মামুনকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনের বত্যয় ঘটেছে। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। তাকে গ্রেপ্তার করার আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা দরকার ছিল, সেটা পুলিশ করেনি।
এদিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের আন্দোলনে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবিগুলো হলো, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার অবৈধ। এর যথাযথ ব্যাখ্যা এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সসম্মানে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত হাসপাতালের কর্মীদের নির্ভয়ে কর্মপরিবেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া বিএপি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়শেনের নেতাদের উপস্থিত হয়ে কর্মকর্তাদের কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে দেয়ার দাবি জানান তারা।
গত ৯ নভেম্বর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যান পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম। পরে হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে তাতে দেখা যায়, একদল ব্যক্তি হাসপাতালে যাওয়ার পর তাকে একটি রুমে নিয়ে মারধর করছেন। অভিযোগ ওঠে যে, এই মারধরের সময় ওই কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে যারা আনিসুল করিমকে টেনে হিঁচড়ে ওই কামরাটিতে নিয়ে যায় তারা কেউই চিকিৎসক ছিলেন না। এদের মধ্যে চারজন ওয়ার্ড বয়, দুজন সমন্বয়কারী, আর কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী ছিল। এদেরকেসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার পরামর্শে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আদাবরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। ডাক্তার মামুন মাইন্ড এইড হাসপাতাল ছাড়াও টাঙ্গাইলের একটি এবং ঢাকার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতাল রোগী দেখেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, কমিশনের ভিত্তিতে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে রোগী পাঠাতেন মাইন এই হাসপাতালে।