বরিশালে হারবাল চিকিৎসার নামে মহা প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে এক শ্রেণির ভূয়া হারবাল চিকিৎসক। যাদের প্রধান টার্গেট নগরীর নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। আর তাদের প্রতারণা ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই এখন কঠিন ও জটিল রোগে ভূগছে। কেউবা আবার তাদের অপচিকিৎসায় নিজের যৌবন হারিয়ে দিশেহারা। দরিদ্র ও অল্প শিক্ষিত বিশাল এক জনগোষ্ঠী প্রতিদিন এই অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এলোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি বা অল্টারনেটিভ মেডিসিন বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃত। গাছ গাছড়ার ভেষজ চিকিৎসা থেকে শুরু করে আকুপাংচার ও অন্যান্য ব্যতিক্রমী চিকিৎসা বিভিন্ন দেশে চালু আছে। এরই ধারাবাহিকতায় নগরীর একটি অসাধু চক্র বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ভেষজ বা হারবাল চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যা দেশের আধুনিক ও বিজ্ঞান নির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বরিশাল নগরীসহ আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত জনপদে ইউনানী-আয়ুর্বেদ, ভেষজ, হারবাল ও কবিরাজি চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা। নগরী ও গ্রাম অঞ্চলের হাট-বাজারে বিশেষ করে যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেখানেই এসকল প্রতারকদের দেখা মেলে। এসব ভূয়া ও কথিত হারবাল সেন্টার গুলোতে চিকিৎসা নিয়ে রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দূরের কথা, উল্টো অপচিকিৎসার শিকার হয়ে শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, বরিশালে এ ধরনের হারবাল চিকিৎসার নামে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বরিশাল নগরীর বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট ও জনবহুল এলাকাগুলোতে প্রচারপত্রে এসব হারবাল চিকিৎসার লিফলেট বিতরণ করে যৌন দুর্বলতার চিকিৎসার নামে পুরুষ ও মহিলাদের আকৃষ্ট করছে। এদিকে বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাসষ্ট্যান্ড, নতুল্লাবাদ বাসষ্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, পালাশপুর বস্তি এলাকা, কাশিপুর বাজার, কালিজিরা বাজারসহ নগরীর অলি-গলিতে ছোট-বড় শতাধিক হারবাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এছাড়াও ভ্রাম্যমান কবিরাজগণ গ্যারান্টি সহকারে ঝাঁড় ফুক, স্বামী-স্ত্রী অমিল, প্রেমে ব্যার্থতা, জিনের আছর, যে কোন লোককে বশ করা, জন্ডিস, যৌনরোগ ও ক্যান্সারসহ জটিল ও কঠিন রোগের গাছ-গাছরা দিয়ে তৈরি ঔষধ প্যাকেট করে পসরা সাজিয়ে ভূয়া ঔষধ বিক্রি করে যাচ্ছে। সরেজমিনে নগরীর একাধিক পয়েন্টে ভ্রাম্যমান কথিত কবিরাজদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, তাদের কাছে সরকারি কোন অনুমোদন নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, “বাপ-দাদারা বিক্রি করছে, আমরাও করছি” কেউ কোন দিন জিজ্ঞাসাও করেনি”জানা গেছে, এসব ভূয়া কবিরাজ, চিকিৎসক নগরী ও প্রত্যন্ত হাট-বাজারে নিজেদের তৈরীকৃত প্যাকেটজাত ও বোতলজাত ঔষধ বিক্রি করে থাকে। যাতে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের কোন তারিখও নেই। তবুও শতভাগ গ্যারান্টি দিয়েই বিক্রি হচ্ছে এসব ঔষধ। এরকম অসংখ্য কবিরাজ হকারী করে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে করছে প্রতারণা।
অপরদিকে কথিত হারবাল সেন্টারগুলো ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে দোকান খুলে বসে আছে। স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে, কুরুচিপূর্ণ প্রচারপত্র বিলি করে ও বরিশালের ক্যাবল টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে সব রোগের চিকিৎসায় গ্যারান্টি দেয় তারা। ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে প্রচারিত সেই বিজ্ঞাপন চিত্রে অশ্লীল ভাষা ও নগ্ন দেহ প্রদর্শন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এদের প্রলোভনে পড়ে হতাশাগ্রস্ত ও দিশেহারা সহজ-সরল মানুষ তাদের কাছে ছুটে আসে। তাদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওইসব প্রতারকরা। এদিকে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা চিকিৎসালয়ের সংখ্যা কত এবং ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া এ ধরনের কতগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই ওষুধ প্রশাসন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে, এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে যৌন ব্যাধি ও জটিল রোগ নিরাময়ের নামে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, তা ভুক্তভোগীদের কোন উপকারে আসছে না। কথা হয় হারবাল চিকিৎসা নিতে নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা কালু মাঝির সাথে। তিনি জানান, তার প্রসাবে সমস্যা থাকায় তিন মাস যাবত হারবাল চিকিৎসা করাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হলেও তিনি কোন উপকার পাননি। বরং নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তিনি। গ্যারান্টি ছিল কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে নানাভাবে হেনস্তা হতে হয়।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেজ্ঞ ডা: মোস্তাফা কামাল বলেন, হারবাল ও ভেষজ চিকিৎসার কোনো বৈধতা নেই। অনেক রোগীর জীবন শেষ করে দেয়া হয়। হারবাল চিকিৎসা নিয়ে উল্টো সমস্যায় পড়া রোগী মাঝে মাঝে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।বরিশাল ঔষধ প্রশাসন (ড্রাগ) এর তত্তাবধায়ক অদিতি স্বর্না বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ ওষুধ খাওয়া বা বিক্রি করাও বে-আইনি। তবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বরিশালে খুব শিগ্রই ইউনানী-আয়ুর্বেদ, ভেষজ, হারবাল প্রতিষ্টান গুলোতে অভিযান চালানো হবে।