রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া প্রস্তুতি মিছিলে বোমা হামলার পাঁচ বছর পেরোলেও এখনো শেষ হয়নি বিচার। হামলার দুই বছর পর ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মধ্যে মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১২ জন।২০১৫ সালের এই দিনে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হোসেনী দালানে গ্রেনেড হামলা চালায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। হামলায় দুইজন নিহত ও শতাধিক আহত হন।ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ছয় জঙ্গি কারাগারে আটক আছেন। বাকি চার জঙ্গি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিন বছর আগে মামলাটির বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। প্রায় দুই বছর ধরে দুই আসামির বয়সের জটিলতা ও বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে আছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, দ্রুত এই আলোচিত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
বর্তমানে এই আলোচিত মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। চার্জশিটভুক্ত ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সবশেষ ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর দুই আসামির বয়সের জটিলতার কারণে মামলাটির আর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য আছে।
মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলের পরিদর্শক শফিউদ্দিন শেখ বলেন, তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল নব্য জেএমবি ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।আদালত সূত্র জানায়, হোসেনি দালানে জঙ্গি হামলা মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই হামলায় নব্য জেএমবির ১৩ জঙ্গির জড়িত থাকার সত্যতা পায় ডিবি। এঁদের মধ্যে তিনজন ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে।
মামলার চার্জশিটভুক্ত ১০ আসামি হলেন-মাসুদ রানা ওরফে সুমন (কারাগারে), কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আসিফ (কারাগারে), আবু সাঈদ ওরফে সালমান (কারাগারে), আরমান ওরফে মনির (কারাগারে), রুবেল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে সজীব (কারাগারে), জাহিদ হাসান ওরফে রানা (কারাগারে), চান মিয়া, ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসানউল্লাহ ওরফে মাহমুদ ও শাহজালাল মিয়া।
আসামিদের মধ্যে জাহিদ, আরমান, রুবেল ও কবির ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই হামলায় আরও তিনজনের নাম পাওয়া গেলেও তারা বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। ওই তিনজন হলেন-হিরন ওরফে কামাল, আলবানি ওরফে হোজ্জা ও আবদুল্লাহ ওরফে আলাউদ্দিন।
সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. গোলাম ছরোয়ার খান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় মামলার বিচারকাজও বন্ধ ছিল। এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মধ্যে মাত্র ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে তাঁরা তৎপর রয়েছেন।