প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ১:৪৪
করোনা ভাইরাসের ব্যাপকতা কারণে গত ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুলো , এমনটা ইঙ্গিত করেছেন বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কী ভাবছেনঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা? অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা গুলো জানার চেষ্টা করেছেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ রুহুল আমিন।
সেখানে অনলাইন ক্লাস কল্পনার বাইরে। এ ছাড়া বর্তমানে একটি পরিচিত চিত্র যা ক্রমশ বেড়েছে, তা হলো অনেক পরিবারে দেখা দিচ্ছে আর্থিক সংকট ও মৌলিক চাহিদার অভাব। এমতাবস্থায় যদি অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয় তা অনেকের জন্য অসম্ভব। যদি প্রযুক্তির ব্যবহার সব জায়গায় সফলভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এমন উদ্যোগ কার্যকরী হবে ইনশাআল্লাহ । অনলাইন ক্লাস করার অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে সেশনজটকে।
বর্তমানে সেশনজট অনেক কমিয়ে আনা হলেও করোনার প্রভাবে আবারও সেশনজটের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। তবে অনলাইনে ক্লাস নিলে কিছুটা সেশনজট কমার সম্ভাবনা থাকবে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর বেশি বেশি ক্লাস ও বেশি সময় নিয়ে ক্লাস করে এ সমস্যার সমাধান অনেক অংশে সম্ভব হবে বলে মনে করি। এ ছাড়া শিক্ষা যেহেতু সার্বজনীন, তাই সবার সুবিধা ও অসুবিধার কথা চিন্তা ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ।ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তাছলিমা রূপ পুতুল বলেন- বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিঃসন্দেহ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।
এই প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তি সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত না করতে পারলে বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলা অসাধ্যকর । তবে বর্তমান দেশের প্রযুক্তিব্যবস্থা বিবেচনায় আনলে অনলাইনে ক্লাস বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জ। কেননা, এর জন্য অনেক টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন, সেটি হয়তো সব শিক্ষার্থীর নেই। দেশে এখনও অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে, যেখানে নেটওয়ার্কের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। তাদের কাছে অনলাইনে ক্লাস যেন বিলাসিতার সামিল। কেননা অনলাইনে ক্লাস করতে হলে উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট, ভালো স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের মোবাইল অপারেটর ও তাদের নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সেবার মানও উন্নত বিশ্বের মত ভালো নয়।
এ ছাড়া এ মহামারীতে এমন অনেক পরিবার আছে, যাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবীসহ যারা টিউশনি, পার্টটাইম জব করে পরিবার ও নিজেদের খরচ বহন করত। তাদের কাছে এ মুহূর্তে অনলাইনে ক্লাস একেবারে বেমানান। এই বিপর্যয়ের সময়ে আর্থিক সংকট সবারই রয়েছে।অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের।এমতবস্থায় অনলাইনে ক্লাস করাটা বিলাসিতা মনে হতে পারে।কিন্তু সেশনজট এড়াতে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার কোন বিকল্প নেই।
আমারা যেহেতু সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছি এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণের স্বার্থে মোবোইল নেটওয়ার্ক অপারেটর গুলো এগিয়ে আসতে পারে। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানিগুলো সব সময় লাভ করেই থাকে।এই সংকটময় অবস্থায় নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানিগুলো সাধারণ শিক্ষর্থীদের পাশে দাঁড়ালে ভালো হতো। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানিগুলো স্বল্পমূল্যে কিছু অফার চালু রাখতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত ও আগ্রহী হবে। তাহলে হয়তো অনেকে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
এর মাধ্যমে সেশনজট কমানো সম্ভব হবে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা আছে কি-না তা ভাবতে হবে। ৪জি যুগে বাংলাদেশে এখনো কিছু গ্রাম আছে যেখানে নেটওয়ার্ক সংযোগ যথেষ্ট নেই। কিছু কিছু এলাকায় ৩জি পাওয়াটাই মুশকিল আর ৪ জি তো কল্পনাতীত। এমতাবস্থায় এসব এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হবে।তবে বিষয়টি নিয়ে আরও ভেবে দেখা উচিত।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশীরভাগ শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে আসা। তার উপর ইন্টারনেট প্যাকেজ এর দাম আকাশ সমান । অন্যদিকে, গ্রাম অঞ্চলের ইন্টারনেট ব্যবস্থা খুব বেশি ভালো নয় । তবে, ইন্টারনেটের জন্য প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেয়া হলে সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ সৌরভ মিয়া বলেন - গত মার্চের মাঝামাঝিতে বন্ধ ঘোষনা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু আর কতদিন,কবে রেহাই পাবে এই করোনার মহামারি থেকে? অনিশ্চিত ভবিষ্যতের এই জীবন নিয়ে শিক্ষার্থীরা যখন হতাশ, তখন অনলাইন ক্লাস একটা বড় সুযোগ বলতে পারি। সেশনজট এর হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যাবে।
এমন ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে।শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের বর্তমান রুদ্ধতা কেটে যেতে পারে। তবে যাদের জন্য এ আয়োজন, সে আয়োজনে সবার অংশগ্রহণের সামর্থ রাখে কিনা সে দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি। কারণ আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ভাই-বোন আছেন, যাদের প্রযুক্তি সামর্থ অনেক কম । অধিকাংশই শিক্ষার্থী এখন গ্রামে যাদের নেটওয়ার্ক পাওয়া নিয়েই অনেক ভোগান্তিতে পরতে হয়। সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হওয়াটা একরকম কষ্টসাধ্য ব্যাপার । তাই সামর্থের উপর দৃষ্টি রেখে বেশিরভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে যাতে অনলাইন ক্লাসের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায়, সেই দিকটা মাথায় রাখতে অনুরোধ করছি।