করোনা সত্যি মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে!

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: সোমবার ১৩ই জুলাই ২০২০ ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
করোনা সত্যি মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে!

স্বাভাবিক শান্তির পৃথিবীতে হঠাৎ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে হানা দিলো করোনা ভাইরাস। যার সংক্রামণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাছে। সেই দুর্ভাবনা বাংলাদেশেও এসে আছড়ে পড়ল। সরকারও নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। ৮ মার্চ সবাইকে অবাক করে প্রথম বাংলাদেশে সার্স-কোভ-২ প্রজাতির ভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হয়। চারিদিকে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো।বাড়তে থাকল আক্রান্তের সংখ্যা। সরকার স্ক্রিনিং, টেস্ট, লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন্সহ নানা পদক্ষেপ জোরেশোরে গ্রহণ করতে শুরু করল। সারাদেশ জুড়ে এমন ভীতিকর ও অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি হলো যা আগে দেখেনি জনগণ।

ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার এমন সব বিধিনিষেধ আরোপ করল যে,সবাই ঘরে ঢুকে যেতে শুরু করল।উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সরাইল উপজেলা জুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন মোট ৫২ জন।গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সরাইল উপজেলা স্হাস্ব্য বিভাগ ১৩ জনকে করোনা মুক্ত ঘোষণা ও সনদপত্র বিতরণ করেন,সরাইল উপজেলা স্হাস্ব্য বিভাগ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নোমান মিয়া। আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ আনাস ইভনে মালেক উপস্থিততে এ সময় সনদপত্র গ্রহন করে ব্যবসায়ী সালা উদ্দিন সরুজ করোনায় জয়ের  কথা বলতেই চোখ ভেজা কণ্ঠে বলে, আমাদের সমাজে করোনা সত্যি মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে, করোনা হলো স্বাভাবিক রোগের মতই। 

আমার যেদিন করোনা পজিটিভ জানতে পেরেছি, সেদিন থেকে আমার নিকটতম আত্মীয়-স্বজন আমাকে এক প্রকার তিরস্কার করা শুরু করছে। অনেকে বলেছেন এতোদিনে নাকি পাপে ধরেছে। আমি পাপ করেছি কি না করেছি আমার আল্লাহ ভালো জানে, বিচারের মালিক তিনি করোনা মানুষকে  বৈষম্য  সৃষ্টি করে।এসময় করোনা জয়ী সালা উদ্দিন চোখ ভেজা কন্ঠে বলেন,খারাপ লেগেছিল যখন আমার দুই বছরের ছেলেটা, দরজায় এসে ডাকে আব্বু দরজাটা "একটু খোল"আমি তোমাকে দেখবো। তিনি একটু থেমেই চোখের পানি মুছে বলে,ঐ সময়টা ছিল আমার বড়ই কষ্টের-বড়ো যন্ত্রণার ! পরে পাশের জানালা দিয়ে একটু-দেখি তবে পারিনি কথা বলতে। করোনা কালের সময়ে জাবেদও সরাইল হাসপাতালের আনাস রোমান স্যার অনেক সহযোগিতা করেছেন।

যারা ছিল' আপন তারা কেউ' এগিয়ে আসেনি করোনা কালিন-! উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে'র সেবিকা মোছাঃ তাছলিমা আক্তার করোনা জয় করে বলেন, করোনা পজেটিভ হলে পরিবারসহ সবাই আতঙ্ককর হয়ে যায় এটি ঠিক না। করোনা স্বাভাবিক রোগের মতো। ঔষধ আমাদের  স্যাররা দিয়েছেন সেই ভাবে আমরা খেয়েছি। কষ্ট হল পরিবারের সন্তানরা কাছাকাছি আসতে পারে না। আমি যেমন সেবিকি আমি একজন মা। এতোদিন অনেক কষ্ট পেয়েছি সন্তানরা আদর যেমন পাইনি, রোগীদের ও সেবা করতে পারিনি এ সময়ের ব্যথা-কষ্ট বলা বড় কঠিন। তবে আজ ভালো লাগতেছে আমি আবার সবাইকে আজ থেকে সেবা দিতে পারবো।

স্বাস্হ্য বিভাগের সেবিকা ঝর্ণা রানী করোনা জয়ের কথায় বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর আমার বড় ধরনের কোনো ভয়-ভীতি হয়নি। সাধারণ ভাবে জ্বর সর্দি কাশির মতোই।বারবার গরম পানি গরমাগরম চা পান করলেই হয়। তিনি আরো বলেন,স্বাস্হ্যবিধি মেনে চিকিৎসকেদর পরামর্শে নিয়ে ঔষধ খাওয়া। তবে আমার স্যারা ও নার্স স্টাফরা ঔ সময় অনেক সহযোগিতা করেছে। আজ আমি সুস্থ ও শারীরিক ভাবে ভালো আছি,আবার রোগীদের সেবায় কাজ করতে পারবো বলে মনে আনন্দ লাগছে।