আমাদের বাংলাদেশ। স্বপ্নের বাংলাদেশ। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীআন বাংলাদেশ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানী বাহিনীকে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। বিশ্বের বুকে লাল সবুজের মানচিত্র আজও জ্বল জ্বল করছে। সেই স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকার প্রধান এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
আর তাকে সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও এমপিগণ। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা সক্রমনে সমগ্র বিশ্ব যখন দিশেহারা তখনই একটি চক্র ফায়দা লুফে নিচ্ছেন বা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ব্যতীত দায়িত্বশীল কেউ ওই চক্রটিকে বাধা প্রদান করছেন না।
উল্টো ওই চক্রটির অসৎ কর্মকান্ড প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই একটি বিবৃতি দিয়ে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা’ করছেন। অথচ তারা বুঝতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় যে সুনাম অর্জন করেছেন তা ক্ষুন্ন হচ্ছে। তবে কি এই ১৮ কোটি মানুষের সকল দায়িত্ব একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর? সরকার প্রধানতো আর একা দেশ পরিচালনা করছেন না।
আমরা জানি, সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্যই মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় রয়েছে। যেমনঃ কৃষকদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, শ্রমিকদের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়, শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজসেবা মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশুদের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। একই ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ইত্যাদি।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। যার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে, আর আক্রান্ত প্রায় দুই লাখ ছুঁই ছুঁই।
করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি এই মহামারীর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, মানুষকে সচেতন করা, স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। যাতে সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৬৪টি জেলার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং ও সমন্বয় করে যাচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬৪ জেলায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ত্রাণ বিতরণসহ সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের ৬৪ জন সিনিয়র সচিব/সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনাকে পুঁজি করে একটি চক্র সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা শুরু করেন। সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে ত্রাণের চাল চুরির খবর, ন্যায্যমূল্যের পণ্য আত্মসাৎ, মাস্ক কেলেংকারি, নকল স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী, সর্বশেষ সরকারের পাশে থাকার নাম করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয় আলোচিত ‘রিজেন্ট হাসপাতাল’। যাতে করোনা প্রতিরোধের চেয়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে ঢের বেশি। কেননা কোন পরীক্ষা ছাড়াই ভুল রিপোর্ট দেয়ায় যাদের শরীরে করোনা সক্রমণ ছিল তারাই হয়তো ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়েছে বা এখনো দিচ্ছে।
আসল কথা হচ্ছে, মন্ত্রণালয় অনেক কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একজন। পৃথক পৃথক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পৃথক পৃথকভাবে দেয়া আছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যেদিকে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি পড়েনি সেদিকেই যেন অন্ধকার থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারী করোনা মোকাবিলায় প্রধান দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর। অথচ সেই স্বাস্থ্য খাত যে কতোটা দূর্বল তা এই মহামারী করোনায় প্রমানিত হলো। চিকিৎসা না পেয়ে আমাদের দেশে এই করোনায় ইতোমধ্যে চিকিৎসকও প্রাণ হারিয়েছেন।
শুধু চিকিৎসকই নয়, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিকসহ অনেক শ্রেনীর পেশার মানুষও এই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের দায়িত্ব কি?
আমাদের দেশে যেমন একান্নবর্তী পরিবার খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তেমনি করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রতিয়মান। একজন প্রধানমন্ত্রী তার সহযোগিদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সেবা পৌছে দেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি এড়িয়ে একটি মহল প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কেবল অর্থের পেছনে ছুটছে। এ দায় একা প্রধানমন্ত্রীর নয়।
কেননা ১৮ কোটি জনগণের জীবন-মান নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপেই একা প্রধানমন্ত্রীর নজরদারী সম্ভব নয়। তবে এও মনে করার কারণ নেই যে, প্রধানমন্ত্রীর নজরে কোন বিষয় নেই। বর্তমান সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার আদর্শে যে দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল রয়েছেন।
টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী হুঁশিয়ারি অনেক গুরুত্ব বহন করে। তবে আমাদের দেশে রাতারাতি দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। দুর্নীতি বন্ধের জন্য শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী নয়, বিভিন্ন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট সকলের। সর্বপরি দুর্নীতি বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরো সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
অপরদিকে দুর্নীতি দূরীকরণে একের পর এক অঘটনের সব দায় যদি প্রধানমন্ত্রী একাই বহন করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতা চলতেই থাকবে। আর বাধাগ্রস্ত হবে আমাদের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন প্রধানমন্ত্রী, আর ১৮ কোটি মানুষ (মতান্তরে আরো কম/বেশী)। ‘দশের লাঠি একার বোঝা’।