প্রকাশ: ৩ মে ২০২০, ১৬:৪১
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে ব্যাংক সুদ অবশ্যই মওকুফ করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রণোদনার টাকা ধাপ্পাবাজি করে নেওয়ার সুযোগ নেই।
ইনিউজ ৭১ : চলমান লকডাউনের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন উদ্যোক্তা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
নজরুল ইসলাম মজুমদার : কভিড-১৯-কে কেন্দ্র করে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদ কী করে মাফ করা যায়! টাকা কার? টাকা তো জনগণের। বেশির ভাগ টাকাই তো জনগণের।স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের ৩০-৪০ শতাংশ। বাকি ৬০-৭০ শতাংশ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের। আর প্রায় ৮০ শতাংশ টাকাই তো জনগণের। তারা তো লাভের বিনিময়েই টাকা রেখেছেন, তাই না! আমরা যদি সুদ মাফ করে দিই তাহলে আমনাতের সুদ দেব কীভাবে? এরপর কর্মীদের বেতন। বাড়ি ভাড়া। অন্যান্য খরচ কীভাবে দেব? আমরাও তো ব্যবসা করি। এটা করলে ব্যাংক তো দেউলিয়া হয়ে যাবে। এ দাবিটা ন্যায়সম্মত নয়। আমি তো ব্যবসা করি। আমারও তো ১০-১২টি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়েছে,
তবে বিশেষ কোনো কেইসে এটা হতে পারে। যেমন কোনো লোক মারা গেছে, আগুন লেগে সব পুড়ে গেছে, কোনো দুর্যোগে সব নষ্ট হয়ে গেছে, তখন এটা হতে পারে। আমি তো ব্যবসায়ী আবার ব্যাংকের পরিচালক। আমরা কীভাবে করব? তবে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে অবশ্যই আমরা তা করব। সরকার নিশ্চয়ই অন্য কিছু ভাবছে। সরকার হয়তো ভর্র্তুকি দেবে। তাহলে আমরা সুদ মওকুফ করে দিতে পারব। যেমন ব্রিটিশ সরকার বলছে তারা বেইলআউট করবে। এটাই একটা প্রক্রিয়া আছে। আরেকটা হতে পারে,
যে পরিমাণ সুদ আমরা মাফ করব তা যদি সরকার আমাদের (ব্যাংকগুলোকে) প্রণোদনা হিসেবে দিয়ে দেয় তাহলে তা করা সম্ভব। এটা তো এত সহজে সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী হয়তো এমন কিছু একটা ভাবছেন। তিনি একজন বিচক্ষণ মানুষ। এত দিন ধরে দেশ চালাচ্ছেন। আমাদের যদি ভর্তুকি দেওয়াও হয় কত টাকা দেবে সরকার। এটা বিরাট অঙ্কের টাকা হবে। কেননা এখন তো সবই বন্ধ। শুধু খাবারের ব্যবসা ছাড়া কিছুই চলছে না। সেগুলোও ঠিকমতো চলছে না।
ইনিউজ ৭১ : ঋণের কিস্তি জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। জুন পর্যন্ত যেন কেউ নতুন করে খেলাপি না হয় সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এটাকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। আপনি কী মনে করেন এ বিষয়ে? জুনের মধ্যে এ মহামারী থেমে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তারা ডিসেম্বরে গিয়েও টাকা দিতে পারবেন কিনা নিশ্চয়তা নেই। ফলে এটা ডিসেম্বর পর্যন্ত হতে হবে। এটা না হলে এতে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট নেগেটিভ হয়ে যাবে। এতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে। এজন্য এটা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে তখন তো ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতির রেটিং কমে যাবে। তখন বিদেশি ব্যাংকগুলো বলবে তোমাদের ব্যবসায়িক এলসি খোলা যাবে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ নানা কথা বলবে। বলবে তোমাদের তো অবস্থা খারাপ। এটা করতেই হবে।
যদি কারও (কোনো ব্যবসায়ীর) কোনো উদ্দেশ্য থাকে টাকা নেওয়ার তাও পারবে না। এটা সরাসরি শ্রমিকদের কাছেই চলে যাবে। আর বাকিটা তো ব্যাংক দেখেশুনেই দেবে। খেলাপিদের কেউই দেবে না।
ইনিউজ ৭১ : ইতিপূর্বে যারা ব্যাংক লোন নিয়ে খেলাপের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের চিরদিনের জন্য ব্যাংক লোন বন্ধ করার দাবি উঠেছে।
কিন্তু শাস্তির একটা ব্যবস্থা তো থাকতে হবে। তাকে নতুন করে ঋণ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দেউলিয়া আইন পাস করে ওই লোককে দেউলিয়া ঘোষণা করা উচিত। এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব অবশ্যই। যাদের সিআইবি রিপোর্ট খারাপ তারা কোনোভঅবেই টাকা পাবে না। তাদের টাকা দিতে কোনো এমডিই সাহস করবে না। কার এত সাহস আছে যে খেলাপিদের আবার নতুন করে টাকা দেবে।
নজরুল ইসলাম মজুমদার : এই মহামরী মোকাবিলার জন্য পৃথক কোনো স্কিম চালুর প্রশ্নই আসে না। বেসরকারি ব্যাংক নতুন করে কী স্কিম চালু করবে! এটা হয় না।
তবে আমরা ভালো ব্যবসায়ীদের টাকা দিয়েই যাব। যারা ভালো ব্যবসায়ী তারা সব সময়ই ঋণ পাবেন। এটা তো অটোমেটিক্যালিই হবে। তবে দুর্যোগকালে আমরা সরকারকে সিএসআরের মাধ্যমে কিছু হেল্প করতে পারি। এটা আমরা সব সময় করি। এবারও দিয়েছি। দরিদ্র মানুষের জন্য দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী দিচ্ছেন। আমরা তো দেখছি। সেটা তো আমরা করছিই।
নজরুল ইসলাম মজুমদার : খেলাপি ঋণ কমানো নির্ভর করে ব্যবসার ওপর। ব্যবসা চালু হলে এটা কমে যাবে। কোনো ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে গেছে, তার ব্যবসা ভালো হলে আবার সে নিয়মিত হতে পারবে। মনে করেন কারও সামান্য কিছু লোন পরিশোধ বাকি থাকতে খেলাপি হয়ে গেছে তখন সেটা যাচাই-বাছাই করে আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। এদের সহযোগিতা দিতে হবে।
নজরুল ইসলাম মজুমদার : এখানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই এ সুবিধা পাবেন। এখানে ধাপ্পাবাজির কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এটা নজরদারি করছেন। ফলে এখানে কোনোরকম দুর্নীতি বা অনিয়ম হওয়ার সুযোগ আমি অন্তত দেখি না।
নজরুল ইসলাম মজুমদার : আমি নিজে রাজনীতি করি না। এটা আমি বলাটা ঠিক হবে না। তবে এটা এই মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে দেখলে হবে না। কে কোন দলের তা বিচার করে লোন দেওয়া হয় না। এটা একটা সর্বদলীয় প্রণোদনাা সেটা তো অবশ্যই ঠিকমতো হবে। এখানে রাজনৈতিক চাপ তো কোনোভাবেই আসবে না। কারণ এটা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখভাল করছেন। আর তিনি তো জনগণের অভিভাবক। সবার কথাই তো তাকে ভাবতে হয়। তিনি তো সবার কথাই বলবেন। এটা স্বাভাবিক।
ইনিউজ ৭১ পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
ইনিউজ ৭১/ জি.হা