১৪ দিন শেষে, আজ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে মুক্তি দিয়েছেন। ১১ এপ্রিল প্রচন্ড জ্বর আর মাথা ব্যথা নিয়ে যখন সন্দেহবশত টেস্ট করাতে যায়, তখন ক্ষুনাক্ষরেও ভাবিনি এতো এতো সতর্ক থাকার পরেও আমার কোভিড-১৯ পজিটিভ আসবে। ১১এপ্রিল সন্ধ্যা ৬:২৪ মিনিটে যখন ফোনে এসএমএস আসলো, এক মূহুর্তের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দ্রুত মেয়ে আর তার মাকে দুরে সরে যেতে বললাম। বন্দি হলাম একা একটা রুমে। মাগরিবের নামাজ পড়ে, অফিসে জানালাম। সবাই সাহস দিলো। একটাই কথা, মনোবল হারানো যাবেনা।
মূহুর্তেই খবরটা ছড়িয়ে গেলো। পরিচিত অপরিচিত অনেক ফোন আসতে শুরু করলো। স্তব্ধতাই এতোটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে, কারো ফোন রিসিভ করতে পারছিলাম না। তথ্য জানাতে শুধু আমার প্রতিষ্ঠানের এমডি, সিইও, নিউজ হেড আর এ্যসাইনমেন্ট এডিটরের সঙ্গে কিছু কথা শেয়ার করলাম। কারন সিদ্ধান্ত, অফিসে কারা আমার সাথে মিশেছে, তাদের আলাদা করতে হবে।
এরপরই শুরু হলো, আমার এক কক্ষে ১৪দিনের জীবন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর দোয়ার পাশাপাশি, নিয়ম মেনে ১৫ দিনের ওষুধ চলতে থাকলো। অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শ অনুযায়ী গরম পানি খাওয়া, গরম পানিতে লবন লেবু দিয়ে গারগল করা, গরম পানির স্টিম নাক দিয়ে নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়া আর আদা-লেবু-গোলমরিচ-লবঙ্গ দিয়ে গরম পানি চায়ের মত করে খাওয়া চলতে থাকলো।
বিভীষিকার দিন ছিলো, পরদিনই যখন থানা থেকে আমার এলাকা লকডাউন করতে এলো। সবাই আমার বাসার দিকে, কেমন একটা চোখ নিয়ে তাকাতে থাকলো। যেনো কোনো মারাত্বক অপরাধ করে ফেলেছি। কৃতজ্ঞতা এসআই মেহেদীর প্রতি, তিনি হ্যান্ডমাইকে এলাকায় ঘোষণা দিলেন- কোনো ধরনের হ্যারাসমেন্ট করা হলে ব্যবস্থা নিবেন।
১৪ দিনের এই সময়ে অনেকেই ফোন দিয়ে সাহস দিয়েছেন। পরিবার, সহকর্মী, বাড়ির মালিক, প্রিয় সংগঠনের বড় ভাইয়েরাসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী খোঁজ নিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আবার অনেকেই অনেক কাছে থেকেও, খোঁজ নেননি, ভালবাসা তাদের প্রতিও। অন্তত আগামী দিনগুলোর জন্য দোয়া করবেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমত এবং আপনাদের সবার দোয়ায় ১৪ দিন শেষে আমার কোভিড-১৯ রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।ইনশাআল্লাহ, দ্বিতীয়বার টেস্ট শেষে অচিরেই কাজে যোগ দিতে পারবো।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।