করোনা ভাইরাসের রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভাসহ কয়েকটি স্থানে লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে হাট-বাজার। অথচ উপজেলার চান্দহর, জামির্ত্তা, বায়রা, বলধারা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ইট ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ভাটাগুলো চালু রেখে শ্রমিকদের বাধ্য করা হচ্ছে কাজে। এসব ভাটা মালিকদের ধারের কাছেও ভিড়ছে না সরকারে দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, এ উপজেলায় শতাধিক ভাটা রয়েছে। প্রায় ৪০ টি ভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই। ইতোপূর্বে উচ্চ আদালতের নির্দেশে অবৈধ ভাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়ার পর উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে মাত্র ৪/৫ টি ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও অজ্ঞাত কারণে বাকিগুলার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ তখন থেকেই এসব ভাটার কাজ চলছে পুরোদমে। তারা সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শ্রমিকদের জিম্মি করে ভাটা চালাচ্ছে।
ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, দেড় থেকে দুই’শ শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে একদিনের জন্যও বন্ধ করেননি ভাটা। শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করছেন শ্রমিকরা । তারা যেন মহামারি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। মুখে মাস্ক ব্যবহার কিংবা সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। শ্রমিকদের কাজ শেষে বিকাল বেলা অযথা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এসব শ্রমিকদের করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা জামির্ত্তার একটি ইটভাটার শ্রমিক করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে দেশে গিয়ে তার মুত্যু ঘটে। ফলে ঐ ইউনিয়নকে লক ডাউনও ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লা। চারিগ্রামের অত্রাইল জেবিসি ইট ভাটায় গিয়ে শ্রমিকদের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের বাঁধার মুখে পরতে হয়। সেখানে অন্তত ২০০ শ্রমিক কাজ করছেন। ভাটার সরদার জাহাংগীর হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস আছে জানি। কি করব ভাটার মালিক আমাদের কাজ করতে বাধ্য করেছে। আমাদের ছেড়ে দেয় না। কাজেই কাজ করতে হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের নিয়ে পরিবার অনেক চিন্তা করছে। কারণ দেশের সবাই যার যার ঘরে আছে। আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
ওই ভাটার মালিক মো.জাফর ইকবাল বলেন, ইটভাটা বন্ধে সরকার কোনো দিক-নির্দেশনা দেয়নি। আমরা কেও কোন চিঠি পায়নি বিধায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া মৌসুম শেষ। এই মুহূর্তে শ্রমিক ছেড়ে দিলে আমাদের বড় ক্ষতি হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুনা লায়লা বলেন, যেখানে পাঁচজন লোক একত্রিত হতে পারবে না, সেখানে এত লোক একত্রিত হয়ে কাজ করছে। আমি বিষয়টি দেখছি। কিন্তু দেখার বিষয়টি কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও থেমে নেই ভাটার কার্যক্রম।