প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩১
পবিত্র জুমার দিন মুসলমানদের জন্য এক অফুরন্ত বরকতের দিন। এ দিনটি অন্য সব দিনের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা এই দিনের মধ্যে এমন কিছু রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন, যা বান্দার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির চাবিকাঠি হতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজে দণ্ডায়মান অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি)
জুমার দিনের শুরু থেকেই আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে যায়। সূর্যোদয়ের পর থেকেই ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় অবস্থান নেন, কে আগে আসে তা লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। যারা আগে মসজিদে যায়, তারা যেন আল্লাহর নিকট বিশেষ সম্মান পায়। রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে, সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং মসজিদে গিয়ে মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে, তার এই জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ মুসলিম)
এই দিনটি শুধু নামাজের জন্য নয়, আত্মশুদ্ধি ও পরিশুদ্ধ জীবনের এক অনন্য সুযোগ। জুমার দিনে কুরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, দোয়া এবং দান-সদকা করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। বিশেষ করে সূরা কাহফ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী সাত দিনের জন্য নূর দান করেন। এটি একপ্রকার আত্মিক আলো, যা মানুষকে অন্ধকার ও বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে।
পবিত্র জুমার মূল শিক্ষা হলো ঐক্য, আত্মসমালোচনা এবং আল্লাহর প্রতি বিনয়। এ দিনে মুমিনরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হয়, যা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। সমাজে যখন অন্যায়, হিংসা ও বিভক্তি বাড়ে, তখন জুমার এই শিক্ষা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—আমরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি, এক কিবলামুখী, এক উম্মাহ।
এ দিনটি মানুষকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “বল, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।” (সূরা আয-যুমার: ৫৩)। তাই জুমার দিনে চোখের পানি দিয়ে তওবা করা, গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, জীবনের সঠিক পথে ফিরে আসার অঙ্গীকার করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
আজকের দিনে আমাদের উচিত নিজেদের হৃদয়কে নরম করা, অহংকার ও রাগ পরিহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকা। কারণ দুনিয়ার মর্যাদা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টিই চিরন্তন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে দশবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।”
জুমার ফজিলত শুধু ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবনে ভারসাম্য আনে। এ দিনে মুমিনরা পারস্পরিক খোঁজখবর নেয়, দুঃখে থাকা মানুষদের পাশে দাঁড়ায়, যা ইসলামী সমাজব্যবস্থার মূল চেতনা। আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সেই, যে অন্যের উপকারে আসে।
তাই আজকের এই পবিত্র জুমার দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—আমরা আল্লাহর পথে ফিরে আসব, পাপ থেকে বিরত থাকব, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেব। আল্লাহর রহমত ও মাফের দুয়ার আজ উন্মুক্ত, তাই আসুন আমরা সবাই তওবার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে নবায়ন করি এবং এই দিনটিকে বানিয়ে তুলি পরম শান্তি ও বরকতের উৎস।