ছোট্ট সোনামণিদের উদ্দেশ্যে লেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ১৬ই মার্চ ২০২০ ০৩:২০ অপরাহ্ন
ছোট্ট সোনামণিদের উদ্দেশ্যে লেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠি

‘ছোট্ট সোনামণি, আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা নিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও ভাই-বোনদের স্নেহ পৌঁছে দিও। পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি শুভেচ্ছা রইলো। 

আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের এদিনে বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের সুযোগ। তাইতো তিনি আমাদের জাতির পিতা।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাবাকে নিয়ে লেখা চিঠিটা শুরু করেছেন এভাবেই। আগামীকাল মঙ্গলবার মুজিববর্ষের উদ্বোধনী দিন প্রধানমন্ত্রীর লেখা এই চিঠি পড়বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী। শিশুদের উদ্দেশে লেখা এই চিঠি স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক শিশুই পৃথকভাবে চিঠিটা পাবে। চিঠিটা এমনভাবে দেওয়া হবে যাতে প্রত্যেকটি শিশুই মনে করে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর জন্যই লিখেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, “দুঃখী মানুষদের ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। বারবার কারাবরণ করেছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করত। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন, তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।

২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছি। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশ এই জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ ‘মুজিববর্ষ’ উদ্যাপন করছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।


প্রিয় বন্ধু, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে জাতির পিতাকে। তাঁর নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পরেনি। ঘাতকরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের। তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের সন্ধানে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তাঁরই ত্যাগের মহিমায়।

সোনামণি, জাতির পিতার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়। পিতা ঘুমিয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তিনি শান্তিতে ঘুমান। তাঁর বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

আমরা জেগে রইব তাঁর আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে মানুষ—প্রজন্মের পর প্রজন্ম—তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। জাতির পিতার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন।

তোমরা মন দিয়ে পড়ালেখা করবে, মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবে।

জয় বাংলার জয়, জয় মুজিবের জয়, জয় বঙ্গবন্ধুর জয়। ইতি, তোমারই শেখ হাসিনা।”

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি শিশুদের পড়ানোর উদ্যোক্তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা। আমরা চেয়েছি, তাঁর জীবন ও কর্ম শিশুরা জানুক। কারণ এই শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যেন চিঠি আকারে তাঁর পিতার সম্পর্কে লেখেন। হয়তো এই চিঠিটাই একদিন আব্রাহাম লিংকনের লেখা চিঠির মতো ইতিহাস হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীকে আমি এই চিঠি লেখার প্রস্তাব দিলে তিনি সম্মতি দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তিনি চিঠিটি লিখে মন্ত্রণালয়ে পাঠান।’

জানা যায়, ১৭ই মার্চ সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর লেখা এই চিঠি একযোগে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়বে। স্কুলের সমাবেশে বা শ্রেণিকক্ষে চিঠিটি পড়বে শিশুরা। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি পৌঁছায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এরপর তা ছাপাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আজ সোমবারের মধ্যেই প্রায় দেড় কোটি চিঠি পৌঁছে যাবে সব স্কুলে। কাল এই চিঠি পড়ার সময় মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব