কুমিল্লার হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস) আসনের সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী। অবশেষে তার বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যেই ইউএনও তাপ্তি চাকমা এক সপ্তাহের ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন। গত বুধবার (৪ মার্চ) সকালে ইউএনও হোমনা থেকে কুমিল্লায় চলে আসেন। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) থেকে দায়িত্ব পালন করছেন হোমনার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া ভূঁইয়া।
এমপির হুমকিতে সাতদিনের ছুটিতে যাওয়া ইউএনও তাপ্তি চাকমা বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি নাকি রাজাকার, আসলে আমি হয়তো রাজাকারের সংজ্ঞাও ভালোভাবে বুঝি না।’
গত মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুপুরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হোমনা ইউএনওর প্রত্যাহার চেয়ে নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, হকার্স লীগ সভাপতি মো. মমিন গত রোববার রাতে সদর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মুজিব শতবর্ষের একটি ব্যানার টাঙাতে গেলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গাড়িচালক মো. শাহজালাল কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ ব্যাপারে মমিন ইউএনওর কাছে অভিযোগ করলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
সেলিমা আহমাদ মেরী বলেন, এটা বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে এখনও রাজাকাররা আছে। আপনারা জানেন আমার কাজ জনগণের সেবা করা। ইউএনওর কাজ আমার নয়। যদি আমার রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেখানে আমি আওয়াজ তুলব। আমি যখন ইউনওকে ফোন করি উনি দুটি কথা বলেছেন, যা আমি গ্রহণ করিনি। প্রথমত তিনি বলেছেন, এটা ড্রাইভারের জায়গা, সেখানে সে (ড্রাইভার) ব্যানার লাগাতে মানা করেছে। আমার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের আকাশ, মাটি, এমন কোনো জায়গা নেই- যেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগানো যাবে না? আর ড্রাইভারের ওই জায়গাটাও তো পৌরসভার জায়গা। দ্বিতীয় কথাটি ইউএনও বলেছেন যে, তাহলে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। আমি প্রশাসনকে ফোন করেছি। প্রশাসনকে বেতন দেয় সরকার। ইউএনও সরকারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। সুতরাং এখানে ইউএনওর একটা বড় দায়িত্ব আছে। এ ব্যাপারে ডিসি সাহেবকেও বলেছি। এর আগে ইউএনওর প্রত্যাহার চেয়ে হকার্স লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ একযোগে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করে। এরপরই তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
এ ব্যাপারে হকার্স লীগ সভাপতি মমিন বলেন, ‘আমি বাসস্ট্যান্ডে ব্যানার লাগাতে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যানের ড্রাইভার শাহজালাল আমাদের বাধা দেন এবং মারধর করতে আসেন। ব্যানার লাগাতে না পেরে চলে আসি। পরে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করি। ইউএনও আমার কথা শুনে শাহজালালকে ডেকে আনেন। শাহজালাল এসে তার বক্তব্য অস্বীকার করেন। পরে ইউএনও তাকে সরি বলতে বলেন। আমি বিচার না মেনে চলে আসি।’
ড্রাইভার শাহজালাল বলেন, বাসস্ট্যান্ডে আমাদের একটি ছোট দোকান আছে। সেটির চালায় উঠে ব্যানার লাগানোর সময় তাদের বলেছি, চালাটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি তাকে বকাঝকা কিংবা মারামারি করিনি। সংসদ সদস্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে ইউএনও তাপ্তি চাকমা বলেন, হকার্স লীগ সভাপতি মমিন একটি অভিযোগ করেছিলেন যে, মুজিববর্ষের ব্যানার লাগাতে গিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ড্রাইভার শাহজালাল কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন। অভিযোগটি পেয়ে তাকে (শাহজালাল) ডেকে আনি। দুপক্ষের কথা শোনার সময় তারা উচ্চস্বরে কথা বলেন। তখন তাদের নিবৃত্ত করতে উভয়কে সাজা দেয়ার ভয় দেখাই। সঙ্গে সঙ্গে শাহজালাল ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মমিনের কাছে ক্ষমা চেয়ে জড়িয়ে ধরে। এতে উভয়েই সন্তুষ্ট হয়ে আমার অফিস থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু পরে আবার কী হলো, বুঝতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, একজন সংসদ সদস্য এতো ছোট বিষয় নিয়ে এভাবে আমাকে হুমকি দেবেন, হোমনা ছাড়ার আল্টিমেটাম দেবেন তা ভাবতেও পারিনি। আমি নাকি রাজাকার? রাজাকার কি এর সংজ্ঞাও আমি জানি না। আমি এতো অপছন্দের হয়ে গেলাম। ইউএনও বলেন, আমি একজন বিচারক অন্তত এতটুকু আমি বুঝি কাকে কখন কি অপরাধে সাজা দিতে হয়। সাজা কেন দিলাম না এটাই আমার অপরাধ। ছোট এই বিষয়টি এভাবে বড় করে সামনে আনা হবে তা ভাবতেও কষ্ট হয়।
ছুটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি বিধি মোতাবেক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। বর্তমানে আমি হোমনার ইউএনও। আমি এসিল্যান্ডকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে সাতদিনের ছুটিতে আছি, পরে যা নির্দেশনা আসবে তাই করবো। এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরীর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই তাপ্তি চাকমা হোমনায় যোগদান করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে হোমনাই তার প্রথম কর্মস্থল। তিনি পার্বত্য খাগড়াছড়ির বাসিন্দা। তিনি খাগড়াছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে) এমএসএস করে ৩১তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। পরে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে বদলি হন। পরে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।