প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:৪০
পরিবেশ দূষণ রোধে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী যখন সভা সেমিনার সহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে তার মধ্যেই বরিশাল নগরীসহ আশপাশের জেলা উপজেলায় বিভিন্ন পরিবহনে বিশেষ করে মটর সাইকেল ও অটোরিক্সায় মারাত্মকভাবে বাড়ছে এলইডি লাইট ও হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার।
ফলে বরিশাল নগরীসহ সদর উপজেলার সড়ক ও মহা-সড়কগুলোতে সন্ধ্যা নামলেই চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ লাইটের আলো এতটাই তীব্র যে বিপরীত দিক থেকে কিছুই দেখা যায়না। ফলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। অপরদিকে নগরীর যান্ত্রিক জীবনে প্রতিনিয়তই বাড়ছে শব্দদূষণ। শব্দ দূষনের ফলে বধিরতার পাশাপাশি বাড়ছে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা। ক্রমাগত বাড়তে থাকা শব্দের মাত্রা আগামীতে অসুস্থ প্রজন্মের জন্ম দেবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শব্দ দূষণ ও এলইডি লাইটের ব্যবহার প্রতিরোধে বরিশাল ট্রাফিক বিভাগ থেকে একাধিকবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ধারাবাহিক অভিযান না হওয়ায় এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
চিকিৎসকদের মতে, এই আলো সরাসরি চোখে লাগলে চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এমনকি ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করে ফেলতে পারে। তাই এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
যানবাহনে এলইডি লাইটের ব্যবহার: বর্তমানে যে কোন সাধারন ব্যক্তি রাতে নগরীসহ সড়ক-মহাসড়কে বের হলেই গাড়ির হেডলাইটের যন্ত্রনায় পড়বে। আর যানবাহনের হেডলাইটের এবং এলইডি লাইটের আলোর প্রভাবে রাতে চলাচল করা অনেকটা ঝুঁকি হয়ে পড়েছে। নগরীর সর্বত্র দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নানান ধরনের যানবাহনের সংখ্যা আর সেই সাথে বেড়ে চলছে এলইডি লাইটের ব্যবহার। যানবাহনের সাথে লাগানো এলইডি লাইটের আলো চলাচলের সময় তীব্র আলো চোখে পড়ায় সাধারন মানুষের পথ চলতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
এই আলো চোখে পড়া মাত্র যেন চোখ ধাধিঁয়ে যায়। ফলে প্রতিনিয়ত মানুষ সড়ক দূর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। এলইডি লাইটের অধিক ব্যবহার বন্ধে ট্রাফিক পুলিশসহ প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নেই। মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তার ধারাবাহিকতা না থাকায় এলইডি লাইটের ব্যবহার কমছে না। রাতে নগরের ব্যস্ততম সড়ক সদররোড, নতুন বাজার, কাকলির মোড়, ল ঘাট, জেলখানার মোড়, বটতলা সড়ক, রূপাতলী, সাগরদী বাজার সড়কসহ প্রায় বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে সরোজমিন দেখা যায় প্রতিটি অটোভ্যান, অটোরিকশা, ইজিবাইক, সিএনজি, মাহিন্দ্রা, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য অনেক যানবাহনে এলইডি লাইটের ব্যবহার।
এছাড়া অন্য লাইট ব্যাবহারকারী যানবাহনের চালকরা এই এলিডি লাইটের আলোর কারণে দাড়িয়ে যায়, কারণ একটু বেপরোয়া হলেই ঘটবে দূর্ঘটনা। অপরদিকে নগরের সড়ক ও মহাসড়কে চলাচলকারী বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ কোন গাড়ির হেডলাইটের উপরের অংশে এখন আর কালো রং ব্যবহার করা হয় না।
যার কারণে এ সকল গাড়ির আলো সরাসরি বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির চালক ও পথচারিদের চোখে ধাঁধিয়ে যায়। আর তখনই ঘটে দূর্ঘটনা। একাধিক চালক বলেন, বিপরীত দিক থেকে আসা অটোভ্যান, অটোরিক্সা বা ইজিবাইকের এলইডি লাইটের আলোর কারণে চালক এবং সাধারন মানুষের পথ চলতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়। সড়ক দুর্ঘটনার কারনগুলোর মধ্যে এটিও একটি অন্যতম কারন বলা চলে। যা এখনই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকদের মতে, এলইডি লাইটের প্রভাবে মানুষের চোখে কর্নিয়া থাকে এবং এই আলো সরাসরি চোখে লাগলে চোখ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন এভাবে আলো চোখে লাগতে থাকলে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যাতে করে চোখে কম দেখা, ঝাপসা দেখাসহ আস্তে আস্তে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ফলে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদ- ও কারাদ-ের বিধান থাকলেও বরিশালে তা প্রয়োগ হতে দেখা যায়নি। জানা গেছে, শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদ- ও কারাদ- দেয়ার বিধান থাকলেও তা কার্যকর না করায় মূলত শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ছে। এ ছাড়া যা থেকে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ হয় তা হলো- পটকাবাজি (৯০-১২০ ডেসিবেল), ডিজেল চালিত জেনারেটর (৮০ ডেসিবল), মিছিল, মিটিংয়ে স্লোগান, লাউড স্পীকার ও মাইকের মাধ্যমে (১১০ ডেসিবেল)।
মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০নং ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। তাছাড়া শব্দ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। ২০০৬ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইনের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী নীরব এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিনে ৫০ এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকা বাঞ্ছনীয়।
এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। শুধু নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে আবাসিক এলাকায় শব্দের মান মাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রের ব্যবহার করা গেলেও বরিশাল নগরী ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিত্যদিন অবাধে চলছে শব্দ দূষণকারী যন্ত্রের ব্যবহার। আসছে শীত মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানসহ নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংশ্লিষ্টরা। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা নামমাত্র অনুমোদন নিয়েই ইচ্ছেমতো মাইক টাঙিয়ে শব্দ দূষণ করে যাচ্ছে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর