বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন এই দেশ ভয়ঙ্কর এক দুর্বৃত্ত চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে। মানবাধিকার নেত্রী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে বিএমএ মিলনায়তনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রাণ-প্রকৃতিবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে বাপা আয়োজিত জাতীয় কনভেনশনে বক্তৃতা করছিলেন। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে কনভেনশনে আরও বক্তৃতা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ প্রমুখ।
সুলতানা কামাল তার বক্তব্যে বলেন, এত বড় ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, সেই দেশটিকে আজকে আবার দেখছি ভয়ঙ্করভাবে একটা দুর্বৃত্ত চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে। এ সরকার জনবান্ধব ও নারীবান্ধব অবস্থান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। এ সরকার এখন শুধু ব্যবসা কিংবা ব্যবসায়ীবান্ধবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নাম দিয়ে যুদ্ধ করলাম। আমরা শুধু একটা ভূখ- দখলের জন্য যুদ্ধ করিনি। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তাদের সামনে কতগুলো নির্দিষ্ট নৈতিক নির্দেশনা ছিল। ভেবেছিলাম এ দেশটা সব মানুষের হবে। সেখানে প্রাণ, প্রকৃতি, মানুষের মর্যাদা, ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৪৮ বছরে দাঁড়িয়েও সেসবের সুরাহা আমরা করতে পারিনি। সেই জায়গা থেকে নিজেরাই সরে গেছি বা সেই জায়গায় পৌঁছানোর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছি। এখন সে বাধা অপসারণ করার একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্ব আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নৈকট্যবোধ করি, আনুগত্যবোধ করি তাদের। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। এ বিপদ মোকাবিলার জন্য উপকূল হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু মোকাবিলার জন্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী না করে সরকার করছে উল্টো কাজ।
তিনি বলেন, সরকার বিশ্বদরবারে গিয়ে বলছে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ঝুঁকির কথা। আর দেশের মধ্যে নদী, বন, মানুষবিনাশী সব প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে আরও ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করছে। উপকূলজুড়ে কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত প্রায় ২২টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আয়োজন করা হচ্ছে। অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, এমন এক সময় আমাদের কনভেনশন হচ্ছে যখন বাংলাদেশে উন্নয়নের একটা বিশাল জোয়ার চলছে, উন্নয়নের জোয়ার একটা ভয়ঙ্কর জোয়ারে পরিণত হয়েছে। বিষাক্ত জোয়ারে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের নামে বাংলাদেশ সরকার উল্টো যাত্রা করছে।
তিনি বলেন, যদি দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকত তাহলে আমাদের এত দীর্ঘ আন্দোলনের দরকার হতো না। কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষের মতামত, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তত্ত্ব ও বিশেষজ্ঞ মত গুরুত্ব পায়। সেগুলো গুরুত্ব পেলে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প বহু আগেই বাতিল হতো, জনবহুল দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হতো।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।