শিশু ধর্ষনে জরিমানার টাকা ভাগ করে নিল মাতাব্বররা

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, নিজস্ব প্রতিনিধি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: শনিবার ২৬শে অক্টোবর ২০১৯ ০৩:০১ অপরাহ্ন
শিশু ধর্ষনে জরিমানার টাকা ভাগ করে নিল মাতাব্বররা

ঢাকার ধামরাইয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষন এবং ঘটনাটি  যেন কাউকে না জানায় সেই জন্য শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মোকছেদ আলী (৫৫) নামের এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধ। এবং শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এই খবর জানাজানি হলে গ্রামের মাতাব্বররা সালিসেতে বসে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবাকে দুই দফা আটকে রেখে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষ্র নিয়ে মাতাব্বররা জরিমানার টাকা ভাগা-ভাগি করে নিয়ে যান।ব্যাপারটি গণমাধ্যমে জানার পর ধামরাই থানার পুলিশ গতকাল শুক্রবার বিকেলে অভিযানে নামে।

পুলিশের সহযিকতায় ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েটির বাবা গতকাল সন্ধ্যায় ধামরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোকছেদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয় ল। পুলিশ ধর্ষন হওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এর মধ্যে মোকছেদ ও তাঁর সহযোগীরা পালিয়ে যান। তাই পুলিশ মোকছেদের স্ত্রীকে  জিজ্ঞাসাবাদের জন্য  আটক করে থানায় নিয়ে যান।  এই ঘটনাটি ঘটেছে ধামরাই উপজেলার চৌহাট ইউনিয়নের একটি গ্রামে। অভিযুক্ত মোকছেদ আলী একই গ্রামের মৃত সাধু বেপারীর ছেলে।পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিশিয়ান।  এই ঘটানার সালিসে জড়িতরা হলেন  স্থানীয় ইউপি মেম্বর ফারুক হোসেন,বাসচালক চান মিয়া,বালিয়াটি ঈঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আল আমীন, স্থানীয় মরন আলী অভিযুক্তে ভাই দরবার আলী এবং মেয়ে,গ্রামের  অলক রায় ও আবু বক্কর সিদ্দিক।

ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটি স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। শিশুটির বাবা দিনমজুর ও মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দিন চালান। প্রতিদিনের মতো সেই দিনও মেয়েকে বাড়িতে রেখে তাঁরা যে যার কাজে চলে যান। শিশুটি  অভিযুক্ত মোকছেদ আলীর বাড়িতে টেলিভিশন দেখতে প্রায় যেতেন এবং সেই দিনও গিয়েছিলেন। এই সুযোগে মোকছেদ আলী  কয়েক মাস আগে শিশুটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। এবং শিশুটিকে হুমকিও দিন যেন কাউকে না বলে তাহলে জবাই করে মেরে ফেলবে। কিছু দিন ধরে মেয়েটির ঋতুচক্র বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি  সে তার মাকে জানায়। তাদের সন্দেহ হলে তারা ক্লিনিকে নিয়ে  পরীক্ষা করায় এবং জানতে পারেন যে শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা। এলকায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকজনের মাধ্যমে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে আপসের চেষ্টা চালায় চার অভিযুক্ত  মোকছেদ আলী। এবং ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী গ্রামের বাসচালক চান মিয়ার বাড়িতে মেয়েটির বাবাকে ডেকে নেইয়ে আটকে রাখেন। এবং তাঁর কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে  স্বাক্ষর নেন মাতাব্বর চক্রের সদস্য ইউপি মেম্বার ফারুক,আল আমীন,মরন আলী,দরবার আলী,অলিক রায় ও অবু বক্কর সিদ্দিক। তাঁরা মেয়েটির বাবাকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জোরপূর্বক ভাবে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করান।

ওই সময় ৬০ হাজার টাকা ধর্ষকের ভাই দরবার আলী, মাতব্বর চান মিয়ার হাতে তুলে দেন। বকি এক লাখ ২০ হাজার টাকা গত বৃহস্পতিবার মেয়েটির বাবাকে দেওয়ার কথা ছিল।কিন্তু  শুক্রবার পর্যন্ত কোন ধরনের কোন টাকা ধর্ষিতার পরিবারকে দেওয়া হয়মি বলে জানান ধর্ষিতার বাবা। ধর্ষিতার বাবা জানান,চাম মিয়া,ফারুক মেম্বারসহ কয়েকজন মিলে তকে  ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়েছেন। বিষয়টি তিনি মেনে নিতে না পারায় তা গ্রামের মাতাব্বর রজ্জব বেপারী, মরণ বেপারী ও সোনা মিয়াকে জানান। তবে বিষয়টি আপসযোগ্য নয় বলে তাঁরা কোনো উদ্দ্যেগ নেননি।

এ ব্যাপারে মেম্বার ফারুক হোসেন সাদা স্ট্যাম্পের স্বাক্ষর নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, চান মিয়ার বড়িতে মীমাংসা করা হয়েছে। জরিমানার এক লাখ ৮০ হাজার  টাকার মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পাবেন ধর্ষিতার বাবা। আর ধর্ষকের ভাই দরবার আলী ৬০ হাজার টাকা চান মিয়ার কাছে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সালিসের প্রধান মাতব্বর চান মিয়া বলেন,ধর্ষককে এক লাখ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দেওয়ায় এখনো মীমাংসা হয়নি  তবে জরিমানার ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। মোকছেদের স্ত্রী এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েটি আমাদের বাড়িতে প্রায় দিন টেলিভিশন  দেখার জন্য আসত। কিন্তু ধর্ষণের  ঘটনা কতটুকু সত্য তা জানিনা।

ধামরাই থানার (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা একজন আটক করেন এবং মেয়েটিকে উদ্দার করা ও মামলা দায়েরের কথা জানান এবং তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সাময়িক আপসযোগ্য নয়। যারা আপস  করেছে তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।