ব্রিজ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর- টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: সোমবার ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:০৮ অপরাহ্ন
ব্রিজ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার!

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-এলেঙ্গা সড়কে চলছে ব্রীজ নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ। এতে পুরাতন ও নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কয়েকটি ব্রীজ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারের দুর্নীতি ও সড়ক বিভাগের যোগসাজশে এ ধরনের কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তবে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এলেঙ্গা-ভূঞাপুর সড়কের এলেঙ্গা থেকে চর গাবসারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক ২৪ ফিট প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের জন্য ৪৭ কোটি টাকার কাজ করছে ২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর ১০টি ব্রীজ ও ১টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ৫৩ কোটি টাকা। এতে ৩টি প্যাকেজে একাধিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করছে। ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের ১লা নভেম্বর। আর শেষ হবে ২০২০ সালের ২০শে জুন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের তাঁতিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ব্রীজের কাজ চলছে ঢিলেঢালাভাবে। ব্রীজের এপ্রোচ নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরাতন ভাঙা ব্রীজের নষ্ট ইট দিয়ে। এরকম দৃশ্য আরো কয়েকটি ব্রীজে। এদিকে, এলেঙ্গা লুৎফর রহমান মতিন মহিলা কলেজ সংলগ্ন কালভার্টটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে অসম্পূর্ণভাবেই। কালভার্টের উত্তর ও দক্ষিণ এপ্রোচ সড়কের মাটি না থাকায় যানবাহন চলাচলের অসুবিধার শেষ নেই। এদিকে প্রতিটি ভাঙা ব্রীজের পাশে যাতায়াতের জন্য বানানো হয়েছে বিকল্প ডাইভারশন সড়ক।

বিকল্প সড়কগুলো তৈরী হয়নি সিডিউল অনুযায়ী। ভাঙা ব্রীজের আবর্জনা দিয়েই তৈরি করা হয়েছে অধিকাংশ ডাইভারশগুলো। ডাইভারশনে নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছিল। সড়কের শিয়ালকোল, কাগমারীপাড়া, নারান্দিয়া, ফুলতলা ও শ্যামপুর বিকল্প সড়ক একেবারে চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে গেছে। বিকল্প সড়কের মাথায় নেই মাটি, একটু পর পরই গর্ত এবং ভাঙ্গা ইটের আবর্জনা। আবার সড়কের ওপরেই রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। রোদ থাকলে বিকল্প সড়ক ধুলোয় হয়ে যায় অন্ধকার। ছিটানো হয় না পানি। ফলে ছোট-বড় যানবাহনগুলো চরম ঝুঁকি নিয়েই ডাইভারশন পারাপার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঝাঁকুনি আর ধুলোয় পথচারীসহ গর্ভবতী মহিলা ও বয়স্কদের ভোগান্তির শেষ নেই। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ডাইভারশনে মোটরযান উল্টে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার পরও কর্তৃপক্ষ দায়সাড়াভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যস্তময় সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। তারাকান্দি সার-কারখানার মালবাহী যান চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। নগরবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, এই সড়কে বিকল্প সড়কগুলো খুবই নিম্নমানের, যাতায়াতই করা যায় না। তাঁতিহারা ব্রীজে পুরাতন নষ্ট ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো দিয়ে কাজ করলে অল্প সময়ের মধ্যেই আবার চলাচলের অযোগ্য হয়ে যাবে। একই অভিযোগ করেছেন এলাকার অনেকেই।

এলাকাবাসী শিডিউল অনুযায়ী কাজ করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁতিহারা ব্রীজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুল ট্রেডার্স লিমিটেডের প্রকৌশলী তারেক হোসেন বলেন, ব্রীজের উপর সাময়িকভাবে যান চলাচলের জন্য এই সামগ্রীগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কথা তিনি অস্বীকার করেন। এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল মাহমুদ বলেন, এই ইটগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সাময়িক চলাচলের জন্য। তবে তিনি নিম্নমানের ডাইভারশন নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেন।

ইনিউজ ৭১/এম.আর