ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র উপনির্বাচন ও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীও স্বীকার করেছেন কেন্দ্রে কম ভোটারের উপস্থিতির কথা।আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম যেখানে কম ভোটারের উপস্থিতি স্বীকার করে ভোটারদের চা-খিচুড়ি খেয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন, সেখানে একই দল থেকে নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল।শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিন্ন সুরে কথা বললেও সকাল থেকে সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভোটকেন্দ্রের বিভিন্ন ছবি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘হতাশামূলক’ বক্তব্যের পর অনেকেই দাবি করেছেন, ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে না যান তবে তাদের যেন জরিমানা করা হয়।
গেল ২২ জানুয়ারি ডিএনসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের আগে পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্বাচনী উত্তাপ দেখা যায়নি রাজধানীতে। অনেকটা আমেজহীন ছিল নির্বাচনী প্রচারণাও। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচন হচ্ছে কিন্তু একটা মিছিল পর্যন্ত শুনলাম না। নির্বাচনী প্রচারণায় উত্তাপ না ছড়ালেও সবার ধারণা ছিল ভোটের দিন সবাই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দেবেন। প্রচারণার সময় মিছিল-মিটিং চোখে না পড়লেও কিছু পোস্টার অন্তত লাগিয়েছিলেন প্রার্থীরা, ভোটের দিন যেন তার চাইতেও নিরুত্তাপ ছিল ভোটকেন্দ্রগুলো।বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার কিছু সময় পর উত্তরার আজমপুরের নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি যে কম সেটা তার চোখ এড়ায়নি। নিজেও স্বীকার করেছেন ভোটারদের কম উপস্থিতির কথা। ভোটকেন্দ্রে যখন প্রার্থীরা নিজের ভোট দেন তখন সাধারণত নির্বাচনের অনিয়ম, অভিযোগের কথা বলার পাশাপাশি নিজের পক্ষে ভোট চান, নিজের জয়ের ব্যাপারে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কিন্তু আতিকুল ইসলাম প্রাধান্য দিয়েছেন অন্য বিষয়কে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানালেন তিনি। তাও আবার গরম চা-খিচুড়ি খেয়ে। তিনি বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা সবাই আসেন। গরম চা খেয়ে, গরম খিচুড়ি খেয়ে ভোট দিতে আসেন। আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুন।ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের কম উপস্থিতি নিয়ে সাংবাদকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে। তবে তিনি যেন অনেকটাই বিরক্ত হন এমন প্রশ্নে। তিনি বলেন, আমরা ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ সৃষ্টি করি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা ভোটার আনতে পারবো না।এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংগীত শিল্পী শাফিন আহমেদও স্বীকার করেন ভোটারদের কম উপস্থিতির কথা। কেন ভোটারদের উপস্থিতি কম, সেই বিষয়ে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই বলেও মন্তব্য করেন।
এছাড়া রাজধানীর মহাখালী, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকার বেশকিছু কেন্দ্র ঘুরে প্রতিবেদকরা জানান, কোনো কেন্দ্রেই তেমন ভোটারের উপস্থিতি নেই। সকাল ১০টা পর্যন্ত কিছু কেন্দ্রে ভোটও পড়েনি। কিছু কেন্দ্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন অনেকটাই বিরক্ত ছিলেন ভোটার না থাকায়। ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের ঘুমিয়ে থাকার কিছু দৃশ্যও ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।তবে সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার মূলে ছিল, ভোটারদের জন্য ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের অপেক্ষা ও আতিকুল ইসলামের গরম চা-খিচুড়ি খেয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ। নগরপিতা নির্বাচনের জন্য যখন ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ তখন অনেকেরই দাবি, ভোট দিতে না গেলে যেন জরিমানার বিধান করা হয়।
আহমেদ জুয়েল নামে এক ব্যক্তি নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভোট না দিলে জরিমানার বিধান করা হোক। এত টাকা খরচ করে ভোটের আয়োজন করা হবে আর পাবলিক ভোট দিতে যাবে না, এটা হতে পারে না।’অনেকে আবার বলছেন, ‘যারা ভোট দিতে যাবেন না তাদের ট্যাক্স যেন বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে সরকারে রাজস্বও কিছুটা বাড়বে।’অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘প্রার্থীরা টাকা-পয়সা খরচ করে প্রচারণা চালাবেন আর ভোটের দিন ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন না, এটা হতে পারে না। ভোটার হওয়ার পরও যদি কেউ ভোট দিতে না যান তবে তার থেকে জরিমানা নেয়া উচিত।’ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের অনুপস্থিতি নিয়ে যখন সর্বমহলে আলোচনা চলছে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রচণ্ড ভিড়। দুপুরে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।