বরিশালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৩০শে জুলাই ২০১৯ ১১:৩৯ অপরাহ্ন
বরিশালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু

বরিশালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নারীসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই যুবক মারা গেছেন। এছাড়া গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক নারী মারা গেছেন। নিহতরা হলেন জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের নাসির খানের পুত্র আসলাম খান (২৪) ও পিরোজপুরের কাউখালি উপজেলার গোসনতারা গ্রামের আদম আলীর পুত্র সোহেল (১৯) ও গৌরনদী আশোকাঠী গ্রামের আলেয়া বেগম (৫০)। আজ মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আসলাম খান সোমবার রাতে শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের তিন নম্বর ইউনিটে ভর্তি হন এবং মঙ্গলবার ভোররাত সোয়া তিনটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। অপরদিকে সোহেল সোমবার দিবাগত রাতে শেবাচিম হাসপাতালের ভর্তি হয়ে মঙ্গলবার ভোররাত পৌনে চারটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। 

তিনি আরও জানান, উভয়রোগী ঢাকা থেকে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে শেবাচিমে ভর্তি হয়েছিলেন। অপরদিকে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে কর্মরত ডাক্তারদের পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি বাতিল ঘোষণা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ওই হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) থেকে বিনামূলে ডেঙ্গু রোগীদের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ দেয়া হচ্ছে। পরিচালক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাসপাতালের স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি আজ থেকে ডেঙ্গু রোগীর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ বিনামূল্যে করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। যেসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেসব ওয়ার্ডে আজ থেকে বাফার স্টক ও পর্যাপ্ত ওষুধসহ স্যালাইন রিজার্ভ করে রাখা হচ্ছে। 

এদিকে ওই হাসপাতালে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন নারী ও ১৬ জন পুরুষ। চলতি মাসের গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়। যার মধ্যে ৩৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এবং ২ যুবকের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে অনেক রোগীর স্থান হচ্ছে মেঝেতে বা বারান্দায়। বাড়তি রোগীর চাপে ওয়ার্ডগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেও হিমশিমখাচ্ছে কর্মীরা। এদিকে ডেঙ্গু জ্বর পরীক্ষার জন্য সরকার সর্বোচ্চ পাঁচশ’ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিলেও বাহিরের অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দেড় থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনরা। আসন্ন ঈদ-উল আযহায় রাজধানী থেকে দক্ষিণা লের মানুষগুলো গ্রামে ফেরার সাথে সাথে ডেঙ্গু জ্বর বিস্তার লাভ করতে পারে বলে আশংকা করেন হাসপাতালের পরিচালক। 

এদিকে ঢাকায় অবস্থানকালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গৌরনদীতে ফিরে এসে গতকাল মঙ্গলবার রাত পোনে ৯টায় আশোকাঠী গ্রামের আলেয়া বেগম (৫০) নামে এক মহিলা মারা গেছেন। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহাবুবুল আলম মির্জা। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মৃত আলেয়া বেগমের ভাসুর পুত্র ও গৌরনদী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, তার চাচা আব্দুল মান্নান ফকিরের স্ত্রী আলেয়া বেগম ঢাকায় ছিলেন। সোমবার গৌরনদীতে ফিরে এসে মেয়ে ঝর্না আক্তার ওরফে ঝুনুর আশোকাঠিস্থ বাড়িতে অবস্থান নেন। ঢাকায় বসে সে জ্বরে আক্রান্ত হন। বিকেলে চাচি আলেয়া বেগম চিকিৎসা নেয়ার জন্য স্থানীয় চিকিৎসক ডাঃ সুকদেব এর কাছে যান। এ সময় চিকিৎসক সুকদেব তাকে এনএস-১ পরীক্ষার জন্য একটি ডায়গনিষ্টিক সেন্টারে পাঠান। পরীক্ষা নিরীক্ষায় রিপোর্টে ডেঙ্গু ধরা পরে। পরবর্তিতে সে গুরুতরভাবে অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাকে স্বজনরা রাত পোনে ৯ টায় গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। 

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহাবুবুল আলম মির্জা জানান, আলেয়া বেগমকে হাসপাতালে আনার পূর্বেই সে মারা গেছে। তার রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা গেছে তার রক্তে এনএস-১ বিদ্যমান ছিল অর্থাৎ পজেটিভ পাওয়া যায়। সম্ভবত ঢাকায় আক্রান্ত হওয়ার পরে সে চিকিৎসা না নিয়ে গৌরনদীতে এসে চিকিৎসকের শরনাপন্না হয়। চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব