চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ও সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন (ফাগুন রেজা)। গত মঙ্গলবার তিনি দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন।আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শেরপুর জেলা শহরের তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয়া মাদ্রাসা মাঠে ফাগুন রেজার জানাজা হয়। জানাজায় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে সদরের চাপাতলি পৌর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।ফাগুন রেজা এনটিভির শেরপুর জেলা প্রতিনিধি ও কলাম লেখক কাকন রেজার বড় ছেলে।ফাগুন হত্যার বিচার দাবি করে শেরপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে দুদিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একইভাবে জামালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।এদিকে সাংবাদিক ফাগুন হত্যাকাণ্ডে সারা জেলার মানুষ শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। ফাগুনের মরদেহ দেখতে কাকন রেজার বাসায় যান জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমান, শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন সানুসহ আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন। তাঁরা গভীর শোক প্রকাশ করে ফাগুন রেজার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।
গতকাল বুধবার জামালপুরের নান্দিনা মধ্যপাড়া রেললাইনের পাশ থেকে ফাগুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগের দিন তিনি ঢাকা থেকে শেরপুরের বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন।ফাগুনের বাড়ি শেরপুর জেলা শহরে। তিনি তেজগাঁও কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতেন। সর্বশেষ তিনি প্রিয় ডটকমে সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। আগামী মাসে আরেকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে তাঁর যোগদান করার কথা ছিল।পুলিশ ধারণা করছে, ফাগুনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে রেললাইনের পাশে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। ফাগুনের মাথায় বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছিল।কাকন রেজা বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো শত্রু ছিল না। কিন্তু কে বা কারা তাকে এভাবে হত্যা করল, বুঝতে পারছি না।’কাকন রেজা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফাগুন ঢাকার মহাখালী থেকে শেরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর বেশ কয়েকবার তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগও হয়। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৮টার দিকে যোগাযোগের সময় ফাগুন তাঁর বাবাকে জানিয়েছিলেন, তিনি ময়মনসিংহের কাছাকাছি অবস্থান করছেন। এরপর ফাগুনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে মোবাইলে কল ঢুকলেও পরে সুইচ অফ পাওয়া যায়।রাতে বাসায় না ফিরলে শেষ রাতে ও বুধবার সকালে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। পরে সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন কাকন রেজা।
পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নিবাস চন্দ্র মাঝির বরাত দিয়ে বুধবার দুপুরে কাকন রেজা বলেন, ‘ফাগুনের মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে দেখা গেছে, তাঁর সর্বশেষ অবস্থান ছিল ময়মনসিংহের একটি গ্রামে। কিন্তু ওই জায়গায় যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’বিকেল ৩টার দিকে খবর পাওয়া যায়, জামালপুরের নান্দিনা মধ্যপাড়া এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে একটি মরদেহ উদ্ধার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। পরবর্তী সময়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেটি ফাগুনের মরদেহ।
জামালপুর রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে স্থানীয়রা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ময়মনসিংহ থেকে কীভাবে জামালপুরে গেলেন ফাগুন, সে বিষয়ে এখনো কিছু বলতে পারেনি পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।