প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান সাড়া ফেলেছে, বেড়েছে 'মুক্তা' পানির কদর

Ziaul Hoque
জিয়াউল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ২২:১

শেয়ার করুনঃ
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান সাড়া ফেলেছে, বেড়েছে 'মুক্তা' পানির কদর

মুক্তা ড্রিংকিং ওয়াটার। এর বিশেষত্ব হলো এই পানি উৎপাদন করেন প্রতিবন্ধীরা। এ পানির কারখানায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাজ করেন না। এ পানি থেকে যে লাভ আসে, তার পুরো অংশই প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’র অধীনে পরিচালিত হচ্ছে মৈত্রী শিল্প প্ল্যান্ট। এখানে তৈরি হচ্ছে এই ‘মুক্তা’ ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি। এতদিন এ বিষয়ে তেমন একটা প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও সম্প্রতি এ পানি ব্যবহারে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে কদর বেড়েছে মুক্তা পানির, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সবাই তার নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে এ বিষয়ে পোস্ট দিচ্ছেন, আহ্বানও জানাচ্ছেন এ পানি ব্যবহারের। সম্প্রতি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অটিস্টিকদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেদের প্রতিভা দিয়ে এরা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘মুক্তা পানি’ মিনারেল ওয়াটারের বোতল হাতে নিয়ে অনুষ্ঠানের সবাইকে দেখিয়ে বলেন, এটিও কিন্তু আমাদের প্রতিবন্ধীরাই তৈরি করছে। এরপর থেকে তিনি এ পানি কেনার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। একপর্যায়ে টেবিলে থাকা মুক্তা পানি চেয়ে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে এই পানিটা, এটা কারা তৈরি করে জানেন? এটা প্রতিবন্ধীরা তৈরি করে।’ তার বক্তব্যের পর থেকে মূলত বেড়েছে মুক্তা পানির কদর, আগের তুলনায় এই পানি বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। এ বিষয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট, মুক্তা পানির কারখানা ব্যবস্থাপক মহসিন আলী বলেন, মূলত প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর থেকে এ পানির বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডিলারশিপ নেয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই মুক্তা পানি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

মুক্তা পানির টঙ্গী শোরুম কাম সেলস সেন্টারের ইনচার্জ সাগর আহমেদ বলেন, হঠাৎ করেই মুক্তা পানি বিক্রি বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গত পরশু আমরা ১৬ টাকার পানি বিক্রি করেছি। মূলত প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর এই বিক্রি বেড়ে গেছে। সবাই এখন খুঁজে নিচ্ছে মুক্তা পানি। কথা হয় মুক্তা পানির ময়মনসিংহের ডিলার আলী আহমদের সঙ্গে। তিনিও বলেন, মুক্তা পানি আগে যেমন বিক্রি হত, তার চেয়ে এখন আরও বেশি বিক্রি হচ্ছে। সবাই এখন এসে শুধু মুক্তা পানিই চাচ্ছেন। ব্যস্ত জীবনে, বিশেষ করে শহুরে জীবনে বোতলজাত পানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর থেকে এ মুক্তার পানি কিনতে সাধারণ মানুষের আরও বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যক্তি পর্যায় থেকে মুক্তা পানি ব্যবহারের পক্ষে নিজ নিজ টাইমলাইনে পোস্ট দিয়ে আহ্বান জানান অনেকে। সব মিলিয়ে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে মুক্তা পানি নিয়ে।

নিত্যপণ্যের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের পেজে বিজ্ঞাপনমূলক পোস্ট দিয়ে বলেছে, ‘পানির অপর নাম জীবন, যাদের জীবন অসম্পূর্ণ তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি এই মুক্তা পানি। আসুন যখনই দরকার হবে পানি, আমরা সবাই মিলে প্রতিবন্ধীদের তৈরি মুক্তা পানিই কিনে আনি। মুক্তা পানি কিনতে আমাদের অর্ডার করুন। আমরা পৌঁছে দেব।’ সরকারি ড্রিংকিং ওয়াটার ‘মুক্তা পানি’র কারখানা গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত। জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের দ্বারা উৎপাদিত ৯টি ভিন্ন ভিন্ন ধারণক্ষমতার বোতলে দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজার লিটার পানি বোতলজাত করা হয়। এর মধ্যে ২৫০ মিলিলিটার, ৫০০ মিলিলিটার, ১ লিটার, ১.৫ লিটার বোতলও রয়েছে। তেমন একটা বিজ্ঞাপন না থাকার কারণে এর প্রসার এতদিন ঘটেনি। মৈত্রী শিল্পের কর্মীদের প্রত্যেকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’। সমাজের অবহেলিত শারীরিক প্রতিবন্ধীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কর্মক্ষম করে তোলার পাশাপাশি কাজের সুযোগ করে দিয়েছে ট্রাস্টটি। প্রতিবন্ধীদের পরিচালিত ট্রাস্টটি এখন মুনাফায় চলছে।

https://enews71.com/storage/ads/01JQ184AJV9F0T856X9BBSG85X.gif

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অধিকারের সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী কর্মীদের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা পানি বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে ট্রাস্টটি।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব

https://enews71.com/storage/ads/01JR36BQSKCPE69WB8Z3TARXE3.jpg

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা

https://enews71.com/storage/ads/01JR3CX28Y9BM01PRE4TXCNDWF.jpg

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

দেশে ফিরল লিবিয়ায় আটকে থাকা ১৭০ বাংলাদেশি

দেশে ফিরল লিবিয়ায় আটকে থাকা ১৭০ বাংলাদেশি

লিবিয়ায় অনিয়মিতভাবে অবস্থানরত এবং দেশে ফিরতে আগ্রহী মোট ১৭০ জন বাংলাদেশিকে সফলভাবে দেশে ফিরিয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। দীর্ঘ অপেক্ষা ও নানা অনিশ্চয়তার পর মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে স্থানীয় সময় ৬টা ১০ মিনিটে বুরাক এয়ারের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে তারা ঢাকা পৌঁছান। পুরো প্রত্যাবর্তন কার্যক্রমটি সম্পন্ন হয় লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং প্রবাসী কল্যাণ

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাসেই রেকর্ড সংখ্যক সাফল্য: প্রেস সচিব

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাসেই রেকর্ড সংখ্যক সাফল্য: প্রেস সচিব

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ মাসে যে পরিবর্তন ও কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে, অতীতে তা কোনো সরকারই করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা উল্লেখ করেন। ‘অন্তর্বর্তী সরকার: নামেই শুধু সরকার, আসলে এক প্রকার এনজিও-গ্রাম’ শীর্ষক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন—অনেকের দৃষ্টিতে এই সরকার ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন। এমনকি মার্কিন

স্বর্ণ–হীরা চোরাচালানে ৬৭৮ কোটি, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

স্বর্ণ–হীরা চোরাচালানে ৬৭৮ কোটি, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা

চোরাচালান ও অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের মালিক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার (৫৭) বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের আর্থিক লেনদেন, নথিপত্র ও ব্যাংক হিসাব যাচাই-বাছাই করে সিআইডি অনুসন্ধান শুরু করে। তদন্তে

শহীদদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

শহীদদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ার পর এটিকে দেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রায় হিসেবে অভিহিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এই রায়ে শহীদরা ন্যায়বিচার পেয়েছে, রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পেয়েছে, প্রসিকিউশন ন্যায়বিচার পেয়েছে।” তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল মামলায় তিন কাউন্টে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই আসামিকে সর্বোচ্চ দণ্ড মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্য এক

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া: শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড বিশ্বজুড়ে শিরোনাম

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া: শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড বিশ্বজুড়ে শিরোনাম

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দেওয়া এই ঐতিহাসিক রায়টি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে শুরু করে দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আল জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসসহ প্রায়