ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তার কাজের মাধ্যমে অল্প সময়েই আলোচিত হয়ে ওঠেন। নগর ভবনের দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা শহরকে বদলে দিতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র আড়াই বছরেই ডিএনসিসি’তে আনেন অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন। এসব কারণে আজও তিনি নগরবাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার মৃত্যুতে অনেক পরিকল্পনা থমকে গেছে। আনিসুল হকের কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে সেই পরিকল্পনাগুলোকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ডিএনসিসির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবারের (২৮ ফেব্রুয়ারি) উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আতিকুল ইসলাম ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত হন। প্রয়াত আনিসুল হকের মেয়াদের বাকি সময় উত্তরসূরি হিসেবে তিনি ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আনিস ভাই (আনিসুল হক) কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি ঢাকা উত্তর সিটিকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার অবদান শুধু নগরবাসী নয়, পুরো দেশবাসী স্মরণ রাখবে। আমার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হবে তিনি যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সেগুলো এগিয়ে নেওয়া। তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আনিস ভাই যে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে এসেছেন আমিও সেখান থেকে উঠে এসেছি। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, ব্যবসায়ীরাও রাজনীতিতে ভালো কিছু করতে পারেন। আমার ইচ্ছাও একই। তার দেখানো পথ অনুসরণ করে আমিও প্রমাণ করতে চাই।’ ২০১৫ সালের এপ্রিলে মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নাগরিকবান্ধব কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন আনিসুল হক। এর মধ্যে, সবুজ ঢাকা কর্মসূচি, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে ফার্মগেট রেলগেট পর্যন্ত সড়কের অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ, আমিন বাজার টু শ্যামলী সড়ক পার্কিং-ফ্রি ঘোষণা, মহাখালীতে ডিএনসিসির উইমেনস হলিডে মার্কেট, হয়রানি রোধে ঠিকাদারদের বিল অফিসে পৌঁছে দেওয়া, সড়কে আধুনিক সাড়ে চার হাজার বাস সার্ভিস চালু, কারওয়ান বাজার ডিএনসিসি মার্কেট থেকে ব্যবসায়ীদের মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে স্থানান্তর, সড়কে এলইডি বাতি লাগানো এবং হাতিরঝিলের আদলে রামপুরা খালের পরিবর্তন ছিল অন্যতম। কিন্তু তার মৃত্যুতে এসবের মধ্যে তেজগাঁও সাতরাস্তা সংলগ্ন ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ ও আমিন বাজার টু শ্যামলী সড়ক পার্কিং-ফ্রি ঘোষণা ছাড়া বাকি উদ্যোগগুলো থমকে যায়। অসমাপ্ত এই পরিকল্পনাগুলো এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে নগর ভবনের দায়িত্ব নিচ্ছেন আতিকুল ইসলাম। আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘নগরবাসীর ভালোবাসা ও ভোটের মাধ্যমে আমি নির্বাচিত হয়েছি। আমার দায়িত্ব হবে, ঢাকা শহর থেকে জলাবদ্ধতা দূর করা। চলাচল উপযোগী ফুটপাত তৈরি করে দেওয়া। ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় নাগরিক সেবাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা।’
তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়কটির পুরোটা দখল করে ট্রাকস্ট্যাড করে রাখা হয়েছিলো। আনিসুল হক দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো সড়কটি দখল মুক্ত করার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে ট্রাক চালক ও মালিকদের প্রতিবাদের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। কিন্তু সিদ্ধান্তে অনড় আনিসুল হক সেই ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে যানচলাচলের জন্য সড়কটি উন্মুক্ত করে দেন। সেই থেকেই তার ওপর আস্থা বাড়ে নগরবাসীর। এছাড়া রাজধানীর বনানীতে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খান পরিবারের অবৈধ দখলে থাকা সড়কের জায়গার অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে সাহসের পরিচয় দেন তিনি। আনিসুল হকের পরিকল্পনায় ছিলো সবুজ ঢাকা গড়ে তোলা। এজন্য তিনি নগরজুড়ে গ্রিন ‘ঢাকা নামে’ একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে সেই প্রকল্প তো দূরের কথা, উল্টো ডিএনসিসির উন্নয়ন কাজে গাছ কাটার নজির দেখা গেছে। পরিচ্ছন্নতা কাজেও লক্ষ করা গেছে ঢিলেমি। এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের সম্মানী দেওয়া থেকে শুরু করে সুযোগ-সুবিধাও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আনিসুল হক। ভোররাত থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ঝটিকা ভ্রমণ করে পরিচ্ছন্নতা কাজসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করতেন তিনি। কিন্তু এখন নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা যাচ্ছে বর্জ্যের স্তূপ। উন্নয়ন কাজেও ভাটা দেখা দিয়েছে। অনেক ঠিকাদার এখন তাদের ইচ্ছেমতোই কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তা কেটে রাখলেও কাজ দ্রুত শেষ করছেন না। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আশা করি আপনারা কোনও কাজে আর ভাটা দেখবেন না। আনিস ভাই যে স্টাইলে কাজ করতেন আমিও সেভাবে করার চেষ্টা করবো। নগরসেবাকে একটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। রাস্তায় ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা, বাতি নষ্ট, ময়লার স্তূপ কিংবা দীর্ঘমেয়াদের খোঁড়াখুঁড়িসহ নগরীর যেকোনও সমস্যার কথা জানাতে মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে। কোনও কর্মকর্তা কাজ না করলে দ্রুত অটোমেটিকভাবে সেই খবর মেয়রের কাছে চলে আসবে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।