দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা ২৬ মামলায় ‘ভুল আসামি’ হিসেবে তিন বছর জেলে কাটানো পাটকল শ্রমিক জাহালমের ঘটনায় দুদকের দায় নেই। ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত, সাক্ষীর জবানবন্দি, ব্যাংকে হিসাবের শনাক্তকারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে মামলায় আসামি করা হয়। এসব মামলায় দুদক ইচ্ছাকৃতভাবে বা অসৎ উদ্দেশে জাহালমকে হয়রানি করেনি বা জেল খাটায়নি। দুদক সরল বিশ্বাসে কাজটি করেছে। এসব কারণ বিবেচনা করে দুদককে জাহালমের ঘটনায় অব্যাহতি দেয়া হোক। দুদকের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান মঙ্গলবার হাইকোর্টে লিখিতভাবে এফিডেভিট দাখিলের অনুমতিসংক্রান্ত আবেদনে এসব উল্লেখ করেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
দুদকের পক্ষ থেকে পৃথক আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংককেও পক্ষভুক্ত করার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করা হয়েছে। অপর চারটি ব্যাংক হল- সোনালী ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক। এসব ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করার বিষয়ে বলা হয়, এদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক জাহালমকে আসামি করেছিল। তারা দুদককে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। কেন এ কাজটি করেছে তারা আদালতে এসে বলুক। দুদকের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, দুদকের পক্ষ থেকে আমি মঙ্গলবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের আদালত থেকে এফিডেভিট দাখিলের অনুমতি নিয়েছি।
আজ (বুধবার) তা আদালতে দাখিল করব। তিনি বলেন, জাহালমের ঘটনায় কেন দুদকের দায় নেই সেই ব্যাখ্যা আমরা আদালতকে দেব। আমরা পুরো ঘটনা অবহিত করব। দুদকের পক্ষ থেকে করা ১৩০ পৃষ্ঠার এফিডেভিটে নিজস্ব বক্তব্য ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন, দুদকের তদন্তসংক্রান্ত তথ্য, একটি বেসরকারি টেলিভিশনে জাহালমকে নিয়ে প্রচারিত রিপোর্টের পর নেয়া পদক্ষেপ, কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি তুলে ধরা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি জাহালমকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে সে দিনই বিষয়টি বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।
জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে ‘ভুল আসামির’ কারাগারে থাকার ব্যাখ্যা জানতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে তলব করেন হাইকোর্ট। শুনানি শেষে ৩ ফেব্রুয়ারি তিন বছর ধরে কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমকে সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, এই ভুল তদন্তে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা, সিন্ডিকেট থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। আদালত দুদকের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে মন্তব্য করেন, এরকম ভুলের দায় দুদক কোনো ভাবেই এড়াতে পারে না। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতেই জাহালম কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।
জাহালমের ঘটনায় দুদক চেয়ারম্যান নিজেও দুঃখ প্রকাশ করেন। হাইকোর্টের নির্দেশনার পর দুদকের একজন পরিচালককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুদক। তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় জাহালমকে ভুলভাবে আসামি করার ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাসহ কার কার দায় আছে সেটি খুঁজে বের করতে। ওই কমিটি এখনও তাদের রিপোর্ট কমিশনে দাখিল করেনি। তবে কমিটি এ ঘটনায় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে পৃথকভাবে খোঁজখবর নিচ্ছে বলে জানা গেছে। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্তকালে ঠাকুরগাঁয়ের সালেকের বদলে টাঙ্গাইলের জাহালম আসামি হয়ে যান। আসামি হিসেবে নামটিকে আবু সালেক ওরফে জাহালম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফলে সালেকের স্থলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয়েছে টাঙ্গাইলের জাহালমকে।
দুদকের প্রধান কৌঁসুলি খুরশিদ আলম বলেন, আমরা আশা করি হাইকোর্টকে বোঝাতে সক্ষম হব- জাহালমের ঘটনায় আমাদের (দুদক) কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। দুদক কাজটি সরল বিশ্বাসে করেছে। ২০০৪ সালের দুদক আইনের ৩১ ধারার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এ ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি বা আদেশের অধীন দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে কোনো কাজের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তার জন্য কমিশন কোনো কমিশনার অথবা কোনো কর্মকর্তা অথবা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না।’ তিনি বলেন, যেহেতু দুদকের কোনো নিজস্ব খারাপ চিন্তা ছিল না বা কাজটি সরল বিশ্বাসে হয়েছে তাই বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনছি।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।