নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নারী ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর করা মামলার অন্য আসামিরা এলাকা ছেড়ে গেছে। তাদেরকেও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। রবিবার ভোট শেষে গভীর রাতে বাড়িতে হামলা করে চার সন্তানের জননীকে দল বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রথমে স্বজনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য এলেও মামলায় বলা হয়েছে অন্য কথা। জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার এই ঘটনায় বাদী হয়ে সোহেলসহ নয় জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। রাতেই বাদশা আলম নামে এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থক। বাকিদের অবস্থান মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরিফ জানান, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী যে মামলা করেছেন সেখানে বলা হয়েছে পূর্ববিরোধের জেরে এই ঘটনা হয়েছে।’
কী নিয়ে বিরোধ- এই প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলায় বলা আছে, জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ আছে। সালাউদ্দিন নামে একজন নাম ধরে ডাকে। দরজা খুলে দিলে সঙ্গে আরো নয় দশ জন মিলে ঘরে ঢুকে। ঘটনাটি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জানান, একটি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সালাউদ্দিন নামে একজনের সঙ্গে তার স্ত্রীর বাক বিতণ্ডা হয়। পরে রাতে এই ঘটনা ঘটে। তবে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘চর জুবলির ইউনিয়নের কোাে ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কারো বাক বিতণ্ডা বা অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনা ঘটেছ। গণধর্ষণের ঘটনাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া য়েছে আওয়ামী সম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই। দলের কেউ এতে জড়িত থাকলে তারও শাস্তি চাই।’ পুলিশ সুপার বলছেন, ‘এটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়। একটা নিছক অপরাধের ঘটনা। ভিকটিমের স্বামী যে অভিযোগ দিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে পূর্ব বিরোধ। একে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’ পুলিশের ভূমিকা কী- জানতে চাইলে ইলিয়াস শরিফ বলেন, ‘ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ মামলা নিয়েছি, একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাকিদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আমরা সবাইকে গ্রেপ্তার করব এবং আইনের আওতায় আনব।’
ভুক্তভোগী নারী যা বলছেন
ভুক্তভোগী নারী এখন হাসপাতালে। সেখানে শুয়ে নিজের দুর্দশার কথা জানান ওই নারী। জানিয়েছেন ১২ জনের নাম। বলেছেন, মোশারফ, সালাউদ্দিন, সোহেল, হঞ্জু মাঝি, বেচু, জসীম, সোহেল (আরেকজন), কালাম, স্বপন, আনোয়ার, বাদশা, হানিফ,- এরা রাত ১২টার দিকে তার ঘর ভাঙচুর করে স্বামীকে মারধর করে। আঁর হুলা মাইয়ারে বেগগুনরে (সবাইকে) বাঁইন্দে (বেঁধে) রাকছিল। আঁরে উডানে নিয়া গেছিল। মুখ বাইন্দা নির্যাতন করছে। আঁরে মুডা মুডা লাডি দি মাইচ্ছে। হের পরে আঁরে হুঁকুর (পুকুর) হারে (পাড়ে) নি জব কইত্তে লাগছিল। আঁই কইছি, ‘বাইরে আঁরে ছাড়ি দেন, জব (জবাই) কইয়েন না। আঁর হুলা মাইয়ারা কারে মা ডাইকব। আঁজে জবাই না করি, হেরা ছাড়ি দিছে। যাওয়ার সময় কইছে, কাউরে কইলে মাইরালাইব। ঘর জ্বালাই দিব। আঁর, জামাই, আঁর গোলা- হেতেনরে কোবালাইব। আঁই কইছি, আঁই কাউরে জানাইতাম নঁ। পাশের বাড়ির লোক দেখছিল, হেরা জানি গেছিল। হেরা আঁর শ্বশুর আর দেওয়রা গিয়া আঁরে নিয়া আসছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। গাইনি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ধর্ষিতার চিকিৎসা চলছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।