ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার ২৭৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে বরাদ্দের এই তালিকা ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। কারণ, ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি আসন—ঢাকা-০৯, ঢাকা-১০ এবং ঢাকা-১১—অন্তর্ভুক্ত এলাকায় ২৭৩টি প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৯টি আসনের জন্য কার্যত কোনো বরাদ্দই নেই।
বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া ২৭৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঢাকা-১০ আসনে, যেখানে ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ এবং নিউ মার্কেট এলাকা অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মাত্র সপ্তাহখানেক আগে ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তিনি বলেন, “কাদের সুপারিশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আমি জানি না। অনেক জায়গায় বরাদ্দ গেছে।” তবে একই সময়ে তার মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তার নতুন ভোটার এলাকায় সবচেয়ে বড় বরাদ্দ আসায় সমালোচনা বাড়ছে।
এছাড়া, বাকি ১২৮টি বরাদ্দ গেছে ঢাকা-০৯ এবং ঢাকা-১১ আসনে, যেখানে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দু’জন নেতা—নাহিদ ইসলাম এবং তাসনিম জারা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—বরাদ্দ কি ভোট প্রভাবিত করার কৌশল?
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এ অভিযোগ নাকচ করে বলেন, “যারা আবেদন করে তারাই বরাদ্দ পায়। কাউকে জোর করে বরাদ্দ দেওয়া যায় না।” তিনি আরও জানান, “আগামী কয়েক দিনে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গাতেও বরাদ্দ যাবে।”
তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে বিশেষভাবে বরাদ্দ দেওয়া নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু। এটি নৈতিকতার পরিপন্থী।”
তার মতে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে এভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলে ভোটারদের প্রভাবিত করার প্রশ্ন এড়ানো যায় না। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—যদি স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হতো, তাহলে এমন অনিয়ম বা পক্ষপাতমূলক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ কমে যেত।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের বরাদ্দ দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষিত হওয়ার কথা। ফলে বরাদ্দের নৈতিকতা, উদ্দেশ্য এবং নির্বাচন আচরণবিধি মেনে হয়েছে কি না—এসব প্রশ্ন এখন আলোচনার কেন্দ্রে।