প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৭:১৬
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের আর্থিক খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, কিন্তু রাজনৈতিক খাতে এখনও অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনীতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকার কারণে এখনই কেউ বিনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়বে এমন প্রত্যাশা বাস্তবসম্মত নয়। রাজধানীর গুলশানে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। গভর্নর আরও জানান, বিনিয়োগের দিক থেকে পাইপলাইনে ইতিবাচক সংকেত দেখা যাচ্ছে, তবে বড় বিনিয়োগ আসতে সময় লাগবে। নির্বাচনের আগে এবং পরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকায় বড় কোনো বিনিয়োগকারী এখন আসতে আগ্রহী নাও হতে পারেন। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও রিফর্ম এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দুটো বড় চ্যালেঞ্জ, যা ভবিষ্যতের যে কোনো সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সংলাপে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্রহণের সময় দেশের অর্থনীতি বিপদজনক অবস্থায় ছিল। এক বছরে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, তবে অনেক চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা দেশের মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা ধরে রেখেছেন, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি হতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মানিলন্ডারিং বন্ধ হওয়ার ফলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তিনি বর্তমান বাজেট নিয়ে সমালোচনা করেন এবং বলেন, সামাজিক খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট হওয়া উচিত ছিল।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় টেক্সটাইল খাতে কর্পোরেট কর বৃদ্ধি ও কাঁচামালের ওপর শুল্ক আরোপ হয়েছে, যা শিল্পের জন্য বাধা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, গত এক বছরে শ্রমিকদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সৃষ্টি হয়নি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট শিল্পকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেন, কিছু ব্যাংক লুটপাটের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেগুলো বন্ধ করে ভালো ব্যাংকের শাখা বৃদ্ধি করা উচিত।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক চাঁদাবাজির প্রভাব রয়েছে, বছরে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়, যা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, এই সমস্যা নিয়ে আরও আলোচনা ও সমাধানের প্রয়োজন।
সংলাপের আলোচনায় উঠে এসেছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, তাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনা জরুরি। আর্থিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ধারাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সহযোগিতা করে একটি স্থিতিশীল ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সম্মিলিত সচেতনতা তৈরি করতে হবে।