প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২৫, ১১:৭
পাঁচই আগস্ট সকাল থেকেই ঢাকার আকাশে যেন থমথমে এক চাপা উত্তেজনা। সরকার ঘোষিত কারফিউর কারণে রাজধানীর সব সড়কে কাঁটাতারের ব্যারিকেড, সেনাবাহিনীর অবস্থান এবং পুলিশের টহলে রাজধানী পরিণত হয় এক রুদ্ধশ্বাস নগরীতে।
মহাখালী, বনানী, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, গুলশানসহ প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কড়া পাহারা বসানো হয়। কারফিউ পাশ থাকা সত্ত্বেও সংবাদকর্মীরা পড়েন সেনা-পুলিশের জেরার মুখে। ঢাকার প্রবেশমুখে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে আটকে দেওয়া হয় চলাচল।
তবে সকাল ১০টার পর থেকে বদলে যেতে থাকে চিত্র। কাঁটাতার আর ব্যারিকেড উপেক্ষা করে রাস্তায় নামতে শুরু করেন শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষসহ হাজারো জনতা। উত্তরা থেকে শুরু হয় মিছিল, যা সেনা সদস্যদের অনুরোধ উপেক্ষা করে এগিয়ে চলে গণভবনের দিকে।
শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও অবস্থান নেন শত শত শিক্ষার্থী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়লেও থামানো যায়নি মিছিল। পরে পুলিশ নিজেই অনেক জায়গা থেকে সরে যায় এবং ছাত্ররা একে একে মোড়গুলো দখলে নেয়।
রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডাসহ আন্দোলনের হটস্পটগুলোতেও সকাল ১১টার পর হাজারো মানুষ হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হতে থাকে। সেসময় হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সংযোগ। ততক্ষণে ঢাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের গুঞ্জন।
দুপুর ১টার পর রাজধানীর রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ। ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেন মায়েরা, শিশুরাও। অনেকে পথে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন, কেউ কাঁদেন দু’হাত তুলে। শাহবাগ, উত্তরা, রামপুরা—সবখানে একই চিত্র।
বিকালে গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীগুলো সরিয়ে নিলে হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করে ভিতরে। গণভবনে ভাঙচুর, লুটপাট চলে। কেউ তুলে আনেন মাছ, কেউ চেয়ার-টেবিল, কেউ আবার তুলেন বিজয়ের স্লোগান।
বিকালে বিজয় স্মরণীতে শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল প্রতিকৃতি ভেঙে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাদের বাড়িঘরে চলে হামলা। সারা ঢাকায় তখন একটাই স্লোগান—“দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ”।