অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে, যা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামোয় এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ ঘোষণাপত্রে ২৬ দফার একটি রাজনৈতিক রূপরেখা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার ভিত্তিতে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগস্টের ৫ তারিখের মধ্যে যেকোনও দিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ঘোষণাপত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন। ইতোমধ্যে এই খসড়াটি প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি)—পাঠানো হয়েছে তাদের মতামত গ্রহণের জন্য।
জানা গেছে, বিএনপি এবং এনসিপি ইতোমধ্যে তাদের মতামত যুক্ত করে প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। জামায়াত আগামী ২-১ দিনের মধ্যে মতামত জমা দেবে বলে জানিয়েছে। ঘোষণাপত্রে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসনের সমালোচনা, বিগত আন্দোলনের স্বীকৃতি, এবং সাংবিধানিক সংস্কারের দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঘোষণাপত্রটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো...
ঘোষণাপত্রে বিএনপির দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে ১৯৭৫ সালের সিপাহী জনতার বিপ্লব এবং জিয়াউর রহমান সরকারের অধীনে করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর স্বীকৃতি রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে একটি বৈধ রাজনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ এবং ‘গণবিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে এবং গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে।
ঘোষণাপত্রে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গঠনের দিক নির্দেশ করা হয়েছে। তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা, গুম-খুনের বিচার এবং সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "আমরা জুলাইয়ের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবো। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে তার বর্ণনা থাকবে।"
ঘোষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ড. ইউনূসের অধীনে নতুন রাজনৈতিক চুক্তি ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে।
এছাড়াও, ঘোষণাপত্রে ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে এই দলিল কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এনসিপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল সংবিধানে পুরো ঘোষণাপত্র সংযুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে, যেখানে বিএনপি চায় এর একটি অংশ বা একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ থাকুক।
গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে এই ঘোষণাপত্রের পরিকল্পনা শুরু হয়।