প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ২২:১৯
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে অবিলম্বে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। মঙ্গলবার (২৭ মে) সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশ আবার আস্থার পথে ফিরবে, যার প্রভাব পড়বে রাজস্ব আদায়, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার একটি সময়সীমার কথা বললেও তা যথেষ্ট নয়। তিনি মনে করেন, আগামী বাজেট বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট নির্বাচন তারিখ ঘোষণা করা যৌক্তিক হবে, কারণ বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, ফলে অর্থনীতি দুর্বল থেকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও বাস্তবে সম্ভব নয়।
সিপিডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং রাজস্ব ঘাটতি গিয়ে ঠেকতে পারে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায়। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হলে কেবল নির্বাচন নয়, জরুরি কাঠামোগত সংস্কারও দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার অজুহাতে যেসব সংস্কার থেমে আছে, সেগুলো এখনই শুরু করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংক খাত, বাপেক্স, এনবিআরসহ মূল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ জরুরি। তিনি মনে করেন, নির্বাচনের পরেই কেবল সংস্কার হবে — এমন চিন্তা ঝুঁকিপূর্ণ।
সিপিডি আরও জানায়, সম্প্রতি মহার্ঘ ভাতা অনুমোদনের কারণে অতিরিক্ত প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। এতে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়বে বলে তাদের অভিমত। বাজেট বাস্তবায়নের এই চাপ দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আরও কোণঠাসা করবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফিরলে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আসবে না, তেমনি দেশীয় উদ্যোক্তারাও ঝুঁকি নিতে চাইবে না বলে সিপিডি সতর্ক করে। তাদের মতে, সময়মতো নির্বাচন না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।
তাদের আহ্বান, দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে এখনই রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করা হোক, যাতে দেশ আবার উন্নয়নের মূলধারায় ফিরতে পারে।