বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটনকে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়, তাহলে ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হতে পারে। তবে, যদি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে আগামী বছরের জুনে হতে পারে।" বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটি রূপান্তরকালীন অবস্থায় রয়েছে এবং সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণ করা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়। ব্যারোনেস উইন্টারটন এসময় বলেন, "আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং আমরা বাংলাদেশের সংস্কারের দিক-নির্দেশনায় সন্তুষ্ট।"
এদিকে, ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, "দেশটি একটি রূপান্তরিত সময় অতিক্রম করছে এবং এটি আমাদের জন্য সংকটময় একটি মুহূর্ত। বর্তমান সময়ে আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন এবং অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণে মনোনিবেশ করছি।"
প্রধান উপদেষ্টা নার্সিং খাতে দক্ষ কর্মীর অভাবের কথা তুলে ধরে জানান, "বাংলাদেশে নার্সের ব্যাপক অভাব রয়েছে। এটি শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক এক চ্যালেঞ্জ।" তিনি আরও বলেন, "আমরা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং পৃথিবীজুড়ে আরও নার্স তৈরি করতে চাই।"
স্বাস্থ্যসেবাখাতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা কামনা করে ড. ইউনূস বলেন, "সরকারি স্বাস্থ্যসেবাখাত বর্তমানে অকার্যকর। এখানে যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রেও আমাদের সহযোগিতা দরকার, বিশেষ করে ভ্যাকসিনের পেটেন্ট সুরক্ষা তুলে নেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারে।"
এছাড়া, দুই পক্ষ শিক্ষা, বস্ত্রশিল্প, প্রতিরক্ষা ও বিমান চলাচলসহ কৌশলগত সহযোগিতার আরও বিস্তৃত ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন। ড. ইউনূস বলেন, "আমরা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে, বস্ত্র খাত আধুনিকায়ন করতে এবং প্রতিরক্ষা ও বিমান খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চাই।"
নারী সমঅধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা নারীর অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি, কারণ নারী ক্ষমতায়ন আমাদের উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রে রয়েছে।"
বৈঠকে ব্যারোনেস উইন্টারটন চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন প্রদানের কথা জানান। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার নিয়ে প্রধান আলী রিয়াজের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।