বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তারা বাংলাদেশের ব্যবসার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশটির অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। শুক্রবার বেইজিংয়ের ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল’-এ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বিনিয়োগ সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস চীনা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, “আপনারা বাংলাদেশের ব্যবসার সম্ভাবনার সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।” তিনি বাংলাদেশের গুণগত এবং ভৌগোলিক সুবিধাগুলির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি চমৎকার ভৌগোলিক অবস্থানে অবস্থিত, যেখানে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রসহ বড় বড় নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে, যা দেশের বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। তিনি বঙ্গোপসাগরের কথা উল্লেখ করে সমুদ্রপথের ব্যবসায়িক সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ নিজে একটি বৃহৎ বাজার হওয়ার পাশাপাশি নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকার মাধ্যমে এসব দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে। তিনি এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানব সম্পদও একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, কারণ দেশে ১৭ কোটি মানুষের বসবাস, যারা মূলত যুবক এবং উদ্যমী। বাংলাদেশের যুবক জনগণ সৃজনশীলতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং উদ্যমে পরিপূর্ণ, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় শক্তি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগণকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। “বাংলাদেশে তরুণ জনগণের অভাব নেই, পুরুষ এবং নারীরা সমানভাবে উন্নতির জন্য অংশগ্রহণ করছে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের বর্তমান রূপান্তরের প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ সম্প্রতি এক সম্পূর্ণ নতুন দেশে পরিণত হয়েছে।” তিনি এই রূপান্তরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশ তার সৃজনশীল শ্রমশক্তি এবং উদ্ভাবনী মনোভাবের মাধ্যমে এক বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র হতে পারে, যা চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চীনা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
তিনি এই সময়ে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে সহযোগিতার সুযোগের কথা তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের শিল্প খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে চীনের সাহায্য এবং বিনিয়োগের গুরুত্ব জানিয়েছেন।
ড. ইউনূস চীনকে বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখেন এবং বিশ্বাস করেন যে, এই সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের উপকারে আসবে।