সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া কওমীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় গভীর রাতে এক নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। মাদ্রাসায় ঢুকে পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এই ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতের কোনো এক সময়, যখন মাদ্রাসা বন্ধ ছিল এবং ছাত্ররা তাদের পড়া-লেখা শেষ করে বাড়ি চলে গিয়েছিল। সোমবার ভোরে মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা বদিউজ্জামন মাদ্রাসা খুলে দেখেন যে, একটি কক্ষের টেবিলের ওপর রাখা পবিত্র কোরআন শরীফগুলো পুড়িয়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। তবে আশ্চর্যজনকভাবে পাশের টেবিলগুলোর কোরআন শরীফগুলো অক্ষত রয়েছে।
এ ঘটনাটি জানাজানি হতেই স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হয়ে দূর্বৃত্তদের শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি প্রশাসনকে অবহিত করার পর, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তারা এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে, তাড়াশ উপজেলা প্রশাসন দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান, সেনা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার শরিফুল ইসলাম, তাড়াশ থানার ওসি আসলাম হোসেন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান এবং বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
তাড়াশ থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেছি। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”
মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা বদিউজ্জামন জানান, ঘটনা খুবই দুঃখজনক এবং মাদ্রাসার পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি প্রশাসন দ্রুত এই অপরাধীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে। পবিত্র কোরআন শরীফের অপমানের এই ঘটনাটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক।”
স্থানীয় মুসলমানেরা এই ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তারা দাবি করেন যে, মাদ্রাসাগুলোর নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। তারা আশাবাদী যে, প্রশাসন এ ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।
স্থানীয় মুসলিম সমাজের নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, এ ধরনের অপরাধ কখনই মেনে নেওয়া হবে না। তারা আরও বলেছেন যে, যারা এই অপরাধ করেছে, তাদের সঠিক শাস্তি পাওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।
এদিকে, এলাকাবাসী এই ঘটনার দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা আশা করছেন, প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করবে।
এ ঘটনায় তাড়াশ থানার পুলিশ আরও জানিয়েছে, তাদের তদন্ত চলছে এবং তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে, আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনা এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে এক নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা এলাকার শান্তি এবং ধর্মীয় পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে তারা আশাবাদী যে, প্রশাসন দ্রুত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।