প্রকাশ: ৯ মার্চ ২০২৩, ১৭:০
দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ রোগে আক্রান্তদের একসময় কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়। তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন ছাড়া বাঁচার উপায় থাকে না। এ দুটো চিকিৎসা পদ্ধতি খুবই ব্যয়বহুল। দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মাত্র ২০ ভাগ রোগী কিডনি ডায়ালাইসিসের সুযোগ পান। বাকি ৮০ ভাগ কিডনি রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকেন। চিকিৎসা না পেয়ে এদের বেশির ভাগই মারা যান।
কিডনি রোগীদের চিকিৎসার জন্য সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিটিতে ৫০ বেডের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট থাকবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে কিডনি সুস্থ রাখা যায়। কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যয়াম ও সুষম খাদ্যগ্রহণ করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল দূর করতে পারলে কিডনি রোগ অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। ধূমপান পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে ১০ বেডের কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট থাকতে হবে।
প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ ও কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়মিত নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত প্রশ্রাব পরীক্ষা করেই কিডনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এছাড়া খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়মিত ব্যয়ামসহ একটু সচেতন হলেই কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য, অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের প্রস্তুতি, প্রয়োজন ঝুঁকিপূর্ণদের সহায়তা’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন, ক্যাম্পাস, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে কিডনি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মিরপুর, আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বছর কিডনি দিবস এলে কিডনি রোগ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু দেশের ৮০ ভাগ কিডনি রোগী চিকিৎসাসেবার বাইরে থাকছে, তাদের চিকিৎসাসেবার আওতায় আনার কার্যকরী কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে কিডনি রোগে আক্রান্ত প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। যাদের মধ্যে ডায়াবেটিসজনিত কারণে ১১ ভাগ, উচ্চ রক্তচাপের কারণে ২০ ভাগ ও নেপরাইটিসের কারণে ২৫ ভাগ রোগী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া খাদ্যে ভেজাল, কেমিক্যাল সংমিশ্রণে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী, পরিবেশগত, ভেজাল ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ব্যথানাশক ওষুধ সেবনসহ নানা কারণে দেশে কিডনি রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশু কিডনি রোগীর সংখ্যাও ব্যাপক হারে বাড়ছে।
দেশে আক্রান্ত কিডনি রোগীদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ ভাগের কারণ জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, বিষাক্ত কেমিক্যাল ও খাদ্যে ভেজালের কারণে তাদের কিডনি নষ্ট হয়েছে। দেশে করোনার কারণে অনেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। কিডনি রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে ওষুধেও তাদের কাজ হয় না। পরবর্তী সময়ে তারা কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত হন। ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরাও কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশে কিডনি চিকিৎসাব্যবস্থা খুবই সীমিত। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে সরকারিভাবে দেশে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। তবে দেশের বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যেসব কারণে কিডনি রোগ হয় তার অন্যতম কারণ হলো ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। এই বিষয়ে একটু সচেতন হলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই রোগ থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আক্রান্তদের মধ্যে দরিদ্র রোগীর সংখ্যা অনেক।
কিডনি রোগের লক্ষণ: আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো বৃক্ক বা কিডনি। কোনো কারণে কিডনি আক্রান্ত হলে বা কিডনিতে কোনো রকম সংক্রমণ হলে শরীরে একের পর এক নানা জটিল সমস্যা বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাই কিডনির সমস্যা বা অসুখকে ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ বলেই ব্যাখ্যা করে থাকেন অনেক চিকিৎসক। কারণ কিডনির সমস্যা বা অসুখের নির্দিষ্ট কোনো উপসর্গ হয় না। তবে কয়েকটি উপসর্গ যা দেখলে অত্যন্ত সাধারণ বলে মনে হলেও এগুলো লক্ষ্য করলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া দরকার। মুখ, চোখের কোণ যদি হঠাৎ অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে ওঠে, তা হলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ কিডনির সমস্যা বা অসুখের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। বার বার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করলে সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন! কিডনি সঠিক ভাবে কাজ না করলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাত, পা বা পিঠের পেশিতে ঘন ঘন অস্বাভাবিক টান বা খিঁচুনি ধরা। ত্বক অসময় হঠাৎ শুষ্ক হয়ে যায়। গোড়ালি বা পায়ের পাতা হঠাৎই অস্বাভাবিক ফুলে যায়। একাধিকবার মূত্রথলিতে সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়াও প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথাও করতে পারে।