সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশ নিলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইন ২০২৩ বিল’ পাস হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অধ্যাদেশ, ১৯৭৭ রহিত করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এর আগে বিলটির ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং সংশোধনীগুলো কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়। তবে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের একটি সংশোধনী গৃহণ করা হয়েছে।
বিলে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ দণ্ডণীয় অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এই অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।
বিলে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা সংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশ বিশেষ প্রতিস্থাপন করলে বা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয়নি এ ধরনের উত্তর সম্বলিত অতিরিক্ত পৃষ্টা কোনো উত্তর পত্রের সঙ্গে সংযোজন করলে তার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে।
এতে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা এখান থেকে কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করলে বা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সহায়তা করলে তার দণ্ড হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।
বিলের বিধান অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ছাড়া অন্যান্য অপরাধের সাজা মোবাইল কোর্টের আওতাভুক্ত হবে। বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্সের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এমনভাবে বহাল থাকবে যেন এটি এই আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন সভাপতি, অন্তত ৬ জন এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। কোনো বিভাগীয় অফিস, জেলা অফিস বা অধস্তনের অফিসের কোনো পদ যাতে এই অফিসের প্রধান বা অফিসের অন্য কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক নিয়োগ প্রদান করা হয় এমন পদে নিয়োগের বিষয়ে কমিশনের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক হবে না। এ ছাড়া কোনো আইন দিয়ে কমিশনের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে এমন কোনো চাকরি বা পদে নিয়োগের ক্ষত্রেও পিএসসির পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক হবে না।
বিলে বলা হয়েছে, কমিশন প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান সাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও শর্তাবলি নির্ধারণ করতে পারবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো পর্যালোচনা করে আইন আকারে বাংলায় প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্য পাবলিক এক্সামিনেশন (অফেনসেস) আইন কার্যকর রয়েছে। এই আইনে পাবলিক পরীক্ষার সংজ্ঞায় পিএসসি আয়োজিত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এবং পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আয়োজিত পরীক্ষার মিল না থাকায় প্রস্তাবিত আইনে পিএসসির আওতায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।