‘পাহাড়ধস রোধে নেই স্থায়ী কোনো সমাধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ১৮ই জুন ২০২২ ০৬:২৬ অপরাহ্ন
‘পাহাড়ধস রোধে নেই স্থায়ী কোনো সমাধান

চট্টগ্রামে গত ১৩ বছরে পাহাড়ধসে প্রায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। স্থায়ী কোনো উদ্যোগ না থাকায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


প্রতিবছরের মতো এ বছরও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের শঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো উচ্ছেদ করতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তা সত্ত্বেও পাহাড়েই বসবাস করছে শত শত পরিবার। এ কারণে ঘটছে প্রাণহানির মতো বড় দুর্ঘটনা।


শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে নগরের বাটালি হিল, মতিঝর্ণা আকবরশাহ, হিল-১, হিল-২ এবং বায়েজিদ লিংক রোড-সংলগ্ন পাহাড়, ফয়েজ লেক-সংলগ্ন ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঝুঁকি নিয়ে শত শত পরিবার বাস করছেন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেখান থেকে বেশকিছু পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হলেও কিছু পরিবার থেকে যায়।


এ ছাড়া শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় প্রস্তুত করা হয়, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, কাট্টলি ও চান্দগাঁও সার্কেলাধীন ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। তবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার পরও অনেক পরিবার রাতেই ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে থেকে যায়। অন্যদিকে শুক্রবার (১৭ জুন) রাত ১টার দিকে আকবর শাহ থানাধীন বরিশাল ঘোনা ও রাত ৩টার দিকে ফয়েজ লেকের বিজয়নগর এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে ৪ জন নিহত হন ও আহত হন আরও ১১ জন।


এদিকে দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, চট্টগ্রামে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ না থাকায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। গত ১৩ বছরে পাহাড়ধসে দুই শতাধিক মানুষের মুত্যু হলেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। টানা ভারী বৃষ্টিতেও পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার। তাদের সরানো হয় শুধু বর্ষা মৌসুমে। তবে বর্ষা শেষে তেমন কোনো তদারকি দেখা যায় না।


‘বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম’ বাংলাদেশর সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান রুশাই বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই পাহাড়ধসের শঙ্কা বাড়ে। এরপর কিছু উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ভারী বৃষ্টি হলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্ষা চলে গেলে আর কোনো খবর থাকে না। যে কারণে প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণহানি হচ্ছে। একইসঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে বিপুল সম্পদ।


তিনি বলেন, যদি স্থায়ী কোনো সমাধান না হয়, তাহলে প্রাণহানি আরও বাড়বে। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ। অর্থের লোভে নিম্ন-আয়ের পরিবারদের সেখানে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরিকল্পিত নগরীতে কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি পরিকল্পনা থাকতো তাহলে তাদের কোথাও স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া যেত।


তিনি আরও বলেন, নগরে ৬৫ পাহাড়ের মধ্যে ৩৪ পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এর মধ্যে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি। প্রায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি অনেককে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়।


চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বছরব্যাপী কর্মসূচি থাকে। পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের সরাতে আমরা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। এরপরেও তারা সেখানে থাকছে। তবে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান তিনি।


উল্লেখ্য, পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ২০০৭ সালে। সে বছরের ১১ জুন টানা বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।